Sharing is caring!
সিলেট এইজ: অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ চার বছর পর নতুন কমিটি পেয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তবে গত কমিটির নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি। তবে নতুন কমিটি সংগঠনের ঐতিহ্য ফেরাতে পারবে কিনা- এ নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানামুখী আলোচনা। অনেকে মনে করছেন, এবারের কমিটিতে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক চর্চা করেন, এমন ছাত্রদের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হাত ধরেই সোনালি অতীতের ধারায় ফিরতে পারবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এ সংগঠন। গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের ১৪ দিন পর গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এ ছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ এবং দক্ষিণের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু। এবারের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ইউনিটে সাবেক ডাকসু নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই দুই কমিটির শীর্ষ চার নেতার মধ্যে তিনজনই সর্বশেষ ডাকসুর নেতা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডাকসুর সাবেক এজিএস, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সাহিত্য সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সদস্য ছিলেন। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার দক্ষিণ সাতখামার এলাকায়। তিনি এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সাদ্দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের উন্নয়ন ফি কমানোসহ নানা ধরনের শিক্ষার্থীবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। গত ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে সবার প্রশংসা পান এ ছাত্রনেতা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ইনান ডাকসুতে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠি সদর উপজেলায়। একজন মেধাবী, মিষ্টভাষী এবং বিচক্ষণ ছাত্রনেতা হিসেবে ঢাবি ক্যাম্পাসে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায়। ডাকসু নেতা ছাড়াও শয়ন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া সৈকত বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তাঁর বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়। এর আগে তিনি ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক এবং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। করোনার সময়ে টিএসসি এলাকায় ছিন্নমূল মানুষের আহারের ব্যবস্থা করে আলোচনায় আসেন সৈকত। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ উপাধি পেয়েছেন তিনি। এর আগেও তাঁকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ কমিটিতে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য দিতে দেখা যায়। এই অঞ্চলগুলো হলে, উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ফরিদপুর, বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চল। এসব অঞ্চল থেকেই মূলত নেতা নির্বাচিত হয়। এবারের কমিটিতে উত্তরবঙ্গ, ববৃত্তর চট্টগ্রাম এবং বরিশাল অঞ্চল থেকে নেতারা বেশি এসেছেন।
অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা যা বলছেন : ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির তুলনায় নতুন কমিটি ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বলছেন, নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের অতীত কর্মকাÐ ভালো। তাঁরা যেন শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সচেষ্ট হন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্যাহ সমকালকে বলেন, ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এবার যাঁরা কমিটিতে এসেছেন, তাঁদের অনেকেই আগে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা যেন এই ধারা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নতুন কমিটির শ্রদ্ধা : রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে গতকাল বুধবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নবনির্বাচিত সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তাঁদের সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিট ছাত্রলীগ। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। এর পর বিকেলে কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নতুন নেতাদের প্রত্যয় :ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ, অংশীদারিত্বমূলক নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে কার্যকর করতে আমরা কাজ করব। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির মূলোৎপাটনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি সাধারণ শিক্ষার্থী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের স্বার্থে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন এবং ভিশন বাস্তবায়নের স্বার্থে দায়বদ্ধ থাকব। সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, আমরা যতদিন দায়িত্বে আছি, সারাদেশে প্রতি সপ্তাহে সম্মেলনের উৎসব হবে। উপজেলা ও জেলায় সপ্তাহে, পাক্ষিক অথবা মাসিক সম্মেলনের আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
৫৩৩ পড়েছেন