Sharing is caring!
সিলেট এইজ: আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শেষ করেছে দলটি। তিন বছরেরও বেশি সময়ে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৮টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৬০০ উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার মধ্যে ৭০টির মতো শাখার সম্মেলন করা যায়নি। বাকি ১০ জেলাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সব শাখার সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের পর করা হবে। ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওই বছরের নভেম্বরে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করা এবং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই ছিল সম্মেলন কার্যক্রমের লক্ষ্য। আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আট কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে তিন বছর ধরে এই কার্যক্রম চলেছে। ১৭-১৮ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলছিল এমন একাধিক জেলা শাখার সম্মেলনও হয়েছে। দুই যুগের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা-থানা শাখার সম্মেলনও করতে পেরেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কয়েক হাজার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও ইউনিট সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলা হয়েছে। তবে করোনা সংকটের কারণে দুই বছরেরও বেশি সময় সম্মেলন কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া দ্ব›দ্ব-কোন্দলসহ নানা কারণে তারিখ ঘোষণা করেও কয়েকটি জেলার সম্মেলন করা যায়নি। সংঘাত-সহিংসতায় পÐ হয়েছে কয়েকটি উপজেলা সম্মেলনও। জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব শাখার সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, করোনাসহ নানা কারণে তৃণমূল সম্মেলনগুলো শেষ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা নতুন করে মেয়াদ পার হওয়া কমিটিগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে জাতীয় কাউন্সিলের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, একেবারে তৃণমূলকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সম্মেলনগুলো করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা-থানা সম্মেলন শেষ করে জেলা সম্মেলন করা হচ্ছে। রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরে ইউনিট থেকে সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত দলের একটি ভিত্তি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই জাতীয় কাউন্সিল ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এদিকে আট বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার মধ্যে ৫৮০টির মতো শাখার সম্মেলন হয়েছে। দ্বন্দ্ব-কোন্দলসহ নানা কারণে ৭০টির মতো শাখার সম্মেলন করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক হাজার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলন অথবা কমিটি গঠন হয়েছে। এসময়ে ঢাকা বিভাগের ১৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১২টির সম্মেলন হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে সংকটে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও মাদারীপুর জেলা। সম্মেলন ছাড়াই ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং একই বছরের ১৩ নভেম্বর মাদারীপুর জেলা কমিটি করে দেওয়ার পর এই দুই জেলায় সম্মেলন করা যায়নি। এ ছাড়া ২০১৪ সালে মুন্সীগঞ্জ, ২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জ এবং শরীয়তপুর জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বাকি থাকা জেলা এবং তৃণমূলের অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের পর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগে দলের ১৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গত তিন বছরে সম্মেলন হয়েছে ১৩টিতে। বাকি দুই জেলার মধ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর এবং চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চাঁদপুরের সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করেও সম্মেলন করা যায়নি। ২০১৩ সালের জুন মাসে সম্মেলন ছাড়াই কমিটি করে দেওয়ার পর কোনো সম্মেলন হয়নি চট্টগ্রাম মহানগরে। কয়েক দফা পরিবর্তনের পর সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর এই সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ ডিসেম্বরের জনসভার কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সর্বশেষ সম্মেলনে গঠিত চাঁদপুর জেলা কমিটির মেয়াদও ফুরিয়েছে চার বছর আগে। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত উপজেলাগুলোর সম্মেলন শেষ না হওয়ায় জেলা সম্মেলনও করা যাচ্ছে না সেখানে। রাজশাহী বিভাগের ৯টি সাংগঠনিক জেলার সবগুলোতে সম্মেলন হয়েছে। খুলনারও ১১টি জেলার সবগুলোর সম্মেলন হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের নয়টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন হয়েছে। দলের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, সব জায়গায় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামত বা আলোচনার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের পাঁঁচটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে তিনটির সম্মেলন হয়েছে গত তিন বছরে। বাকি দুই জেলার মধ্যে ২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ এবং ২০১৭ সালে মৌলভীবাজারে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের সাতটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ছয়টির সম্মেলন হয়েছে। বাকি থাকা বরিশাল জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালে। বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন জানান, বরিশাল জেলা সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের পর করা হবে।
৫৩৫ পড়েছেন