Sharing is caring!
সিলেট অফিস: শীত মৌসুমের শুরুতেই সিলেট ও সুনামগঞ্জের পল্লীতে গরু চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। আতংকিত কৃষকরা অনেক স্থানে রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দিনদিন চোর চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে গত বুধবার রাতে কোম্পানীগঞ্জের দুই কৃষকের ১১টি গরু চুরি হয়েছে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে মসজিদে মাইকিং করায় গরু রেখে পালিয়ে যায় চোরচক্র। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আতংকিত না হয়ে গরু নিয়ে কৃষকদের আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম। সেই সাথে গরু চোর চক্রকে পাকড়াও করতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পুলিশী টহল জোরদারের আশ্বাস দেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গত বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার উত্তর কলাবাড়ি গ্রাম থেকে ১১টি গরু চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া গরুগুলোর মূল্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরুগুলোকে গোয়ালঘরে বেঁধে রেখে যান কৃষক মহিবুর রহমান ও মখলিছুর রহমান। তারা ফজর নামাজের পর গরুগুলোকে খেতে দিতে গেলে দেখেন গোয়ালঘরে গরু নেই। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেও গরু না পেয়ে ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক মহিবুর রহমান বলেন, রাতে চোরেরা আমার গোয়ালঘরে রাখা দুইটি গাভি, একটি বকনা ও দুইটি বাছুর চুরি করে নিয়ে যায়। গরুগুলোর মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। আরেক ভুক্তভোগী কৃষক মখলিছুর রহমান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমার ৬ টি গরু গোয়ালেই বাধা ছিল। সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি গোয়ালঘরে গরুগুলো নেই। চুরি যাওয়া ছয়টি গরুর মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, চুরি যাওয়া গরুগুলো উদ্ধার ও চোর শনাক্তের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ দিকে বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে গরু চুরির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বুধবার দিনগত রাত অনুমান ৩ টার দিকে জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা বড় বাড়ীর মৃত হাফিজ ছদরুন নুরের ছেলে রইছ মিয়ার ৪টি গরু গোয়াল ঘর থেকে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। চোরের উপস্থিতি বুঝতে পেরে রইছ মিয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকে ফোন করে মাইকিং করার জন্য বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আস্তমাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি মসজিদে মাইকিং হলে এবং গ্রামের লোকজন চারদিকে বেরিয়ে পড়লে সংঘবদ্ধ চোরেরা কামরুপদলং মাদ্রাসার সামনে ২ টি গরু, কামরুপদলং কান্দির উত্তর পাশে ১টি এবং নাইন্দা নদীর পাশে ১টি গরু ফেলে পালিয়ে যায় চোরেরা। এলাকাবাসী জানান, কয়েকদিন আগে সদরপুর গ্রামের মনসুর আলীর ৩টি, আব্দুল হান্নানের ১টি, ওয়াহিদ আলীর ২টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। এছাড়া, গত কয়েকদিন আগে সুলতানপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী অন্ধ মহিলার ১টি গাভী চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। কয়েকদিন পর ওই মহিলা স্থানীয় জাউয়া বাজারে ভিক্ষা করতে গেলে চোরচক্র বাজারে তুলে গাভীটি বিক্রি করার জন্য। তখন গাভীটি ওই অন্ধ মহিলাকে দেখামাত্র তার পাশে চলে আসে চোরেরা কোনভাবেই গাভীটিকে নিতে পারছিল না। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাভীটিকে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকাবাসী জানান, গরু চুরির উপদ্রব বাড়ায় ভুক্তভোগীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। গরু চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোলাপগঞ্জের কিসমত মাইজভাগ গ্রামের মোজাক্কির আহমদ চৌধুরী হেলু মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, সম্প্রতি চোর চক্র তার গোয়াল ঘরের লোহার গেইট ভেঙ্গে ৫টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় নালিশ করেও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন। চোর চক্রের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
৬১২ পড়েছেন