Sharing is caring!
সম্পাদকীয়: উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানেই দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। গরিব মানুষ কাজকর্ম করতে পারছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমে গেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। তা সত্ত্বেও আবহাওয়াবিদরা এখনো একে শৈত্যপ্রবাহ বলছেন না। তাঁদের মতে, উত্তরের কয়েকটি জেলায় প্রকৃত শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে আগামীকাল বুধবার থেকে। শীতের এই হানা দীর্ঘ সময় ধরেও চলতে পারে। এদিকে কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপও দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে তিন-চার গুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগী সামাল দিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। চরাঞ্চলে, বাঁধের ওপর কিংবা খোলা জায়গায় ভাঙা বেড়ার ঘরে যাদের থাকতে হয়, তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। শীতের কনকনে বাতাস হু হু করে ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে। শহরের ভাসমান মানুষও এ সময় অত্যন্ত বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের গরম জামাকাপড়ের অভাব রয়েছে। লেপ-তোশক বা মোটা কম্বলও নেই। সেই সঙ্গে আছে পুষ্টির অভাব ও রক্তাল্পতা। তাদের পক্ষে শীতের তীব্র কামড় প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। উত্তরাঞ্চলে প্রশাসন থেকে কিছু জায়গায় অতিদরিদ্রদের মধ্যে শীতের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে, কিন্তু তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। শীতের এই সময়ে কুয়াশা প্রবল থাকায় প্রায়ই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। তাই কুয়াশাকালীন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা রোধেও উপযুক্ত কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন।প্রতিবছর শীতের ধকল সামলাতে গিয়ে মানুষ নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়। আগুন পোহাতে গিয়ে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে হাসপাতালে স্থান সংকুলান হয় না। মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতেও রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হয়। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে রক্ষায় হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। দরিদ্র রোগীদের জন্য ওষুধপত্রসহ আর্থিক সহায়তা থাকাও জরুরি। দরিদ্রদের মধ্যে গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণের কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। জরুরি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাও নিতে হবে। অতিদরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী ও মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব কাজে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।প্রকৃতির নিয়মে শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ হবে, গ্রীষ্মে দাবদাহ থাকবে—এসব আটকানোর উপায় নেই। কিন্তু পরিকল্পিত উপায়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হচ্ছে। হঠাৎ করে তীব্র শীত পড়ার কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেসব থেকে জনমানুষকে রক্ষায় উপযুক্ত পরিকল্পনা রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
৪৬৫ পড়েছেন