Sharing is caring!
সিলেট এইজ : সিলেটে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে নারীদস্যূ ও নারী ছিনতাই চক্রের অপতৎপরতা। নারী হওয়য় এবং নারীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও সহানুভুতি থাকার সুযোগে নারী ছিনতাইকারী ও নারী দস্যুরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। সিলেটে বহুল আলোচিত নারী দস্যু কমলা চক্রের সাথে এবার যোগ দিয়েছে ছিনতাইকারী পপি চক্র। পপি দীর্ঘদিন ধরে নারী চিনতাইকারী ও নারী চোরদের নেতৃত্ব দিয়ে আসলেও সে থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে সে চালিয়ে আসছিল তার সকল অপরাধ-অপকর্ম। কিন্তু বিধিবাম এবার আটকা পড়ে গেছে বে-রসিক পুলিশের খাঁচায়। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে আলোচিত এই নারী দস্যুচক্রের সদস্য পপিকে আটক করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করে এসএমপি’র কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এক মাহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল ছিনতাইকালে হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। ধৃত সীমা বেগম পপি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বিÐন্ডা গ্রামের আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী ও নগরীর উপশহর এলাকার বর্তমান বাসিন্দা। পপি বিবাহিত নারী, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর শাহজালাল উপশহরের এইচ বøকের ৪ নং রোডের বিলের পার এলাকায় গড়ে তুলেছে ৪ তলা বাসা। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকে পপি। তার এই বাসায় রাত-দিন রয়েছে পরিচিত-অপরিচিত মাদকসেী ও কামুক প্রকৃতির লোকজনের আনাগুনা। বাসার পাশেই পপির একটি মোদি দোকান ও খামার রয়েছে। তার স্বামী সেই দোকান ও খামার দেখাশুনা করেন। পপির বিরুদ্ধে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বলছে, মানুষের পকেট কাটার পাশাপাশি পপি জড়িয়ে আছেন মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কর্যকলাপ, পতিতাবৃত্তি, মারধর ও ছিনতাইসহ নানা অনৈতিক কাজে। বার-বার ধরা খায় পুলিশ ও জনতার হাতে। ওসমানী হাসপাতাল এবং নগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারে নারী ছিনতাইকারী ও পকেটমার বলে পপির পরিচিতি। বিশেষ করে ওসমানী হাসপাতালে তার দৌরাত্ম্য বেশি। ওসমানী হাসপাতালে চোর পপি বলেই তাকে চেনেন সবাই। বিভিন্ন মামলায তাকে কারাগারে পাঠালেও সে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, পপির বিরুদ্ধে এসএমপির শাহপরাণসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় অর্ধশত মামলা রয়েছে। তার মূল পেশা চুরি। কিন্তু পাশাপাশি ছিনতাই, অসামাজিক কাজ, মাদক কেনাচেনাহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সে। গত ২০১৯ সালের ৩০ মে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে পপি ও তার সহযোগী স্বপ্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন পুলিশ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করে। ওইদিনই তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। একই বছর ৩০ জুন নগরীর জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে স্বপ্না ও পপিকে ফের আটক করে পুলিশ। থানা হাজতে তাদেরকে একরাত আটকেও রাখা হয়। পরে রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসে পপি ও স্বপ্না। বিভিন্ন সময় আরও অন্তত ৫ বার পুলিশ এবং জনতার হাতে ধরা খয়েছে পপি। কিন্তু কিছুতেই থামছে না তার অপরাধ অপকর্ম। সকাল হলেই বোরকা পরে নগরীর অলিগলি ও পথের পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ মারে পপি। ঘুরে বেড়ায় ওসমানীসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে। সুযোগ বুঝে কৌশলে ছিনিয়ে নেন স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও টাকা-পায়সা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে পপি। কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়েই পুরোনো পেশায় জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, মারামারির একটি ঘটনায় এসএমপি’র শাহপরাণ থানায় পপির বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছে। সূত্রমতে, পপি ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা পুলিশের হাতে আটকের পর তাদের শেল্টারদাতাদের খবর দেয়া হয়। তখন তারা থানাপুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে অনেক সময় থানা থেকেই ছাড়িয়ে নেন। আবার কখনও ননএফআইর প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করে নামকা ওয়াস্তে জরিমানার মাধ্যমে তাদেরকে ছড়িয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও পপি একটি কিশোর গ্যাং পোষণ করে এবং পপির ছেলে অন্তর সেই গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগে প্রকাশ। সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, ৯৯৯-এ কল পেয়ে আমদের থানা পুলিশ তাকে সম্প্রতি নগরীর জিন্দাবাজার থেকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা তিনি।
৪৮২ পড়েছেন