Sharing is caring!
সিলেট এইজ : ল্যাংড়া হাসান ওরফে হাসান জমাদ্দার। বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জের রূপারজোর এলাকায়। ১৩ বছর ধরে ডাকাতি করছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঝলকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করা ১৪টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।দেশে ডাকাতি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে থাকেন এই ব্যক্তি। সেখানে আধার কার্ড রয়েছে তার। ভারত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে এসে ডাকাতিতে অংশ নেন। গত ১৭ আগস্ট দুপুরের দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর এলাকার আল-আমিন জুয়েলার্সে একটি ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দোকান থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার লুট হয়,দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরায় পুরো দৃশ্যটি ধরা পড়ে। দুটি মোটরসাইকেলে এসে মাত্র তিন মিনিটে ডাকাতি করে পালিয়ে যান ডাকাত দলের সদস্যরা। আল-আমিন জুয়েলার্সের ডাকাতির ঘটনা সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে। সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে জাগো নিউজের হাতে। এতে দেখা যায়, দুটি মোটরসাইকেলে এসে মাত্র তিন মিনিটে ডাকাতি করে পালিয়ে যান ডাকাতরা। ভিডিওতে দেখা যায়, গায়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবি আর মাথায় কালো টুপি পরা এক লোক হাতে ব্যাগ নিয়ে পা খুঁড়িয়ে স্বর্ণের দোকানে প্রবেশ করেন। তিনি ইশারা করতেই দোকানে প্রবেশ করেন আরও চারজন। ব্যাগ থেকে সাদা রঙের একটি পিস্তল বের করেন তারা। প্রথমে তারা এক দোকানির মাথায় অস্ত্র ঠেকান। অন্য সদস্যরা দোকানের তাক ভেঙে দ্রুত স্বর্ণালংকার লুট করে ব্যাগে ভরতে থাকেন। এক দোকানি বাধা দিলে পিস্তল দিয়ে তার ডান পায়ে গুলি করা হয়। মিশন শেষে পরপর কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আল-আমিন জুয়েলার্সের বিপ্লব মন্ডল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করলেও বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর এক মাস আগে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় একই কায়দায় ডাকাতি হয় প্রদীপ জুয়েলারি নামের আরেক স্বর্ণালংকারের দোকানে। দোকানমালিক কৃষ্ণ কর্মকার বাদী হয়ে মামলাও করেন। সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার একটি ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতিতে জড়িত একটি চক্রকে শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই চক্রের সদস্যরাই কেরানীগঞ্জ ও ভালুকার ডাকাতিতে জড়িত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার অর্ধশতাধিক স্বর্ণের দোকানে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণালংকার ডাকাতি করেছে চক্রটি গত ৩০ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীতে অর্জন চন্দ্র ভাদুরীর স্বর্ণের দোকানে ফিল্মি কায়দায় ডাকাতি হয়। দোকান মালিককে কুপিয়ে ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুখোশপরা ডাকাত দলের সদস্যরা ২৮ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার লুট করে চাঞ্চল্যকর ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে ডাকাতদের শনাক্ত করতে ছায়াতদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে উঠে এসেছে দুর্ধর্ষ ডাকাত ল্যাংড়া হাসান ওরফে হাসান জমাদ্দারের নাম। এক পা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্তঃজেলা ডাকাত দলটির। কেরানীগঞ্জ ও সোনাগাজীর ঘটনায় তিনি সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। মিশন সফল করে ভারতে পালিয়ে যান। তবে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মাঝে মাঝে অবৈধভাবে দেশে আসেন। কেরানীগঞ্জে ডাকাতি মামলার বাদী বিপ্লব মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাতির তিন মাস পার হলেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। ১ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার লুট হলো। আমার ভাইকে ডাকাতরা গুলি করে পঙ্গু করে দিল। স্বর্ণালংকার পাবো কি না তাও জানি না ডিবি জানায়, প্রতিটি ডাকাতির ঘটনায় হাসান জমাদ্দারের নেতৃত্বে অংশ নেন ছয় থেকে আটজন সদস্য। ডাকাতির জন্য দোকান নির্দিষ্ট করার পর ভাড়া করা প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলে সেখানে যান। ডাকাতির লুট করা স্বর্ণ পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট দোকানে বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির পর আত্মগোপনে চলে যান সবাই। তদন্ত সংস্থার একটি সূত্র জানায়, ঢাকার একটি ডাকাতির ঘটনায় ২০১২ সালে ডিবির হাতে গ্রেফতার হন হাসান। চট্টগ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে ২০১৪ সালে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ডাকাতির টাকায় স্ত্রীর নামে গাজীপুরে তিনতলা বাড়ি করেছেন ল্যাংড়া হাসান ওরফে হাসান জমাদ্দার। জানতে চাইলে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে ল্যাংড়া হাসানের নাম সামনে আসে। ডাকাত চক্রের মূলহোতা হাসান জমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযানও পরিচলনা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, হাসানকে গ্রেফতার করতে পারলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির রহস্য উন্মোচন করা যাবে। এছাড়া তার চক্রে আরও কারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
৬২৫ পড়েছেন