Sharing is caring!
সিলেট এইজ নিউজ: সিলেটের কানাইঘাটে দুর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতিবন্ধী নাদিরা তাবাসসুমকে পরীক্ষার হল রুমেই মানসিক নির্যাতন, হয়রানি, ভিডিও ধারণ, পরিক্ষা দিতে প্রতিবন্ধকতা, ছিড়া উত্তরপত্র দিয়ে হয়রানী করার বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা, জেলা শিক্ষাবোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের ধারে-ধারে ঘুরে, লিখিত অভিযোগ করে, বিচার না পেয়ে এবার দেশের সর্বচ্চ আদালত হাইকোটের্র ধারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা নিজাম উদ্দিন। তিনি সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিটপিটিশন মামলা নং ১৪৮০৯/২০২২ দায়ের করলেও আদালত ৫ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। বাদী নিজাম উদ্দিনের পক্ষে মামলাটি শুনানি করেন হাইকোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মোস্তাক আহমদ। মামলার আইনজীবি জানান, আদালত বাদীর আর্জি শুনে বড়চতুল হাইস্কুলের অভিযুক্ত শিক্ষক শুকলা রানী, একই হাইস্কুলের অনারারি শিক্ষক রাসেল চৌধুরী ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আদালতে লিখিত ভাবে অভিযোগের ব্যাখাসহ জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে ভোক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতার করা ১৭/১০/২০২২ ও ২৫/৯/২০২২ ইং পৃথক অভিযোগের বিষয়ে কেনো ব্যবস্থ্য গ্রহণ করা হলোনা সেই মর্মে লিখিত জবাব চেয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আগামী ১ মাসের ভিতরে পৃথক-পৃথক লিখিত জবাবসহ ব্যাখা দিতে রুল জারি করেন আদালত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার বড়চতুল হাইস্কুল উপ:পরীক্ষা(কেন্দ্র কোড-১৪৬, সিলেট-৪) কেন্দ্রে ২০২২ সালের এসএসসি পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতিবন্ধী নাদিরা তাবাসসুমকে পরীক্ষার হল রুমেই মানসিক নির্যাতন করে পরিক্ষা দিতে দেননি ঐ হলের হল সুপার রাসেল আহমদ ও সহকারী শিক্ষিকা শুকলা রানীসহ তাদের সহযোগীরা। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তভোগী শিক্ষার্থী হল সুপারের কাছে অভিযোগ করলে উল্টো তাকে মানষিক রোগী বলে তাড়িয়ে দেন এবং অপমান করেন। মেয়েকে হয়রানীর বিষয়টি মাধ্যমিক অফিসারকে শিক্ষার্থীর পিতা অবহিত করলে, তিনি লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। শিক্ষার্থীর পিতা তাৎক্ষনিক বিষয়টি লিখিত ভাবে কেন্দ্র সচিব ও সহকারী সচিবকে অবহিত করেন। কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি। পরে ২৫/০৯/২০২২ ইং তারিখে ভোক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা নিজাম উদ্দিন সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে জানান। লিখিত অভিযোগ তদন্তকালীন সময়ে ঐ শিক্ষার্থীকে হয়রানি, সঠিক ভাবে পরিক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। উক্ত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ভিন্নখাতে নিতে এবং উক্ত ঘটনা আড়াল করতে ঐ শিক্ষার্থীকে দায়ী করতে শুকলা রানীর পক্ষের কয়েকজন হলগার্ড ভোগল ও পরিবেশ বিষয়ক পরিক্ষার দিন ২৭/০৯/২০২২ ইং একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। পরিক্ষা চলাকালীন নাটকের অংশ হিসাবে ঐ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজে হাজির হয়ে নাদিরাকে প্রশ্নবানে জর্ঝরিত করে ভিডিও ধারণ করেন। ফলে সেদিনও তার পরিক্ষা দেওয়া হয়নি সময় চলে যায় তদন্ত কাজে। এ ঘটনা শুনে আবারও মেয়ের পিতা কেন্দ্র সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এবং ঘটনার বিবরণ দিয়ে গত ২৮/৯/২০২২ ইং তারিখে শিক্ষার্থীর পিতা নিজাম উদ্দিন মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর ঢাকা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কোন প্রতিকার পান নি তিনি। শিক্ষার্থী হয়রানী ও নাজেহাল, পরিক্ষা না দিতে দেওয়া নিয়ে বারবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানাতে যান নিজাম উদ্দিন। তিনি তাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন কর্ণপাত করেননি। এমনকি ভোক্তভোগীর কোন দরখাস্ত রাখতে বারবার অনিহা প্রকাশ করেন তিনি। বাধ্য হয়ে ঐ বিষয়ে অভিযোগ ডাক যোগে প্রেরণ করলে কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তা গ্রহণ না করে রির্টান পাঠিয়ে দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী নাদিরা তাবাসসুম সিলেট বোর্ডের অধিনে ২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষের এসএসসি পরীক্ষার্থী। যার রোল নং ৩২৬০১৮। রেজিস্ট্রেশন নং ১৯১৬৮২৩৫০৭। সে উপজেলার বড়চতুল হাইস্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে এঘটনা ঘটে। সব কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা ঠিক মত হলেও গত ২২/৯/২০২২ ইং গণিত পরীক্ষায় চলাকালীন সময়ে সুকলা রানী নামের এক সহকারী শিক্ষিকা তাকে মানসিক নির্যাতন করে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ও এমআর শীট পরিবর্তন করে নেয়। এছাড়া তদন্তের নামে ২৭/০৯/২০২২ ইং ভোগল পরীক্ষায় চলাকালীন সময়ে সুকলা রানী সহযোগীরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঐ শিক্ষার্থীকে মানসিক ভাবে নাজেহাল করেন। ঘটনার দিন হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা সুকলা রানী প্রথমেই তাকে আংশিক ছেড়া একটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ওএমআর শীট প্রদান করেন। এতে প্রতিবন্ধী ঐ শিক্ষার্থী অনেকবার সুকলা রানীকে এটি পরিবর্তনের কথা জানালে তিনি তা কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে তিনি সমস্যা হবে না বলে ঐ শিক্ষার্থীকে জানালে সে ওএমআর শীটে বৃত্ত ভরাট করতে থাকে। নির্ধারিত ২০ মিনিটে। তাবাসসুম ১৫টি প্রশ্নের মধ্যে প্রায় ১২টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর ওএমআর শীটে বৃত্ত ভরাট করে নেয়। এমন সময় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসছেন জানতে পেরে হলে দায়িত্বে থাকা সুকলা রানী প্রতিবন্ধী নাদিরা তাবাসসুমের আংশিক ছেড়া ওএমআর শীটটি নিয়ে নতুন আরেকটি উত্তরপত্র দেন। তখন নাদিরার হাতে সময় ছিল মাত্র ৫ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে সে পূণরায় তা ভরাট করতে পারেনি বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এসময় সে তার প্রতিবন্ধী কোঠার অতিরিক্ত সময় চাইলেও তাকে তা দেওয়া হয়নি। বরং হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা সহ রাসেল নামের আরেক শিক্ষক তাকে নানা কটুকথা বলতে থাকেন। এমনকি হল ভর্তি শিক্ষার্থীর সামনে নাদিরাকে মেন্টাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। এতে সে চরম মাসনিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষিকা সুকলা রানীর কারনে সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিষয়টি বিশেষ ভাবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আকুল আবেদন করেন বড়চতুল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। তিনি অভিযোগটি শুনে অভিযোক্ত শিক্ষিকা সুকলা রানীকে আর কোন হলের দায়িত্বেদেন নি। দুর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব নুর মোহাম্মদ জানিয়েছিলেন তিনি এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু কোথায়ও কোন প্রতিকার না পেয়ে ভোক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা নিজাম উদ্দিন এবার উচ্চ আদালতের ধারস্থ হলেন।
৪৫৭ পড়েছেন