Sharing is caring!
আব্দুল হালিম সাগর বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেটের তিনটি উপজেলা নিয়ে এক সময় জৈন্তিয়া নামের একটি রাজ্য ছিলো সময়ের প্ররিক্রমায় এখন পৃথক তিনটি উপজেলা গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। ভারতের সীমান্তবর্তী একটি ৩ উপজেলা এখন সীমান্তের অবৈধ চোরাচালানের নিরাপদ রোড। স্থানীয় ভাবে থানাপুলিশ,বিজিবি জড়িত থাকায়তা বন্ধ করতে ব্যর্থ জেলার আইনশংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারণ স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে চোরাকারবারিদের রয়েছে গভির সংখ্যতা, সাপ্তাহিক, মাসিক চুক্তি। সীমান্তের এলাকাগুলোকে চোরাচালানের ভাষায় ঘাট বলা হয়ে থাকে। প্রতিমাসে ঘাটের গোপন নিলাম হয় পুলিশের সাথে। ঘাট বেদে দরদাম ঠিক করা হয়। অভিযোগ রযেছে, প্রতি সপ্তাহে চোরাচালান থেকে প্রাপ্ত অর্থ স্থানীয় প্রশাসনের সব কয়টি ইউনিটের নামে ভাগবাটোয়ারা করা হয় লাইনম্যান ও সোর্সদের মাধ্যমে। এখন কৌশল বদল করে দিনে রাতে নিয়মিত শহরে আসেছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের অবৈধ মোবাইলের চালান, হরেক রকম অস্ত্রের চালান। গরু-মহিষ ভর্তি ট্্রাক। বিভিন্ন মাদক, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ারের চালান। মোটর সাইকেলসহ বিভিন গাড়ির যন্ত্রাংশের চালান। গরু মোটা-তাজাকরণের স্টেরয়েড ট্যাবলেট, নাছির বিড়ি, পাতার বিড়ি, টাটা গাড়ির পার্টস, টায়ার, নিম্নমানের চা-পাতা, হরলিক্স, ঔষধ, কসমেটিক্স, সুপারী, গোলাবারুদও আগ্নেয়াস্ত্রের চালান। হলুদ, জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোল-মরিচসহ যাবতীয় মসলা। ফেয়ার এন্ড লাভলিসহ বিভিন্ন কসমেটিক্স ও সার্জিক্যালের চালান। বিনিময়ে ভারতে পাচার হচ্ছে, মটরশুটি, শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও প্যান্টের থান কাপড়, মশুর ডাল, রসুন, স্বর্ণের বারসহ বিলুপ্ত প্রজাতির সুন্ধি কাছিম (কচ্ছপ)। সম্প্রতি কানাইঘাটে বিশাল একটি চিনির চালান আটক করে পুলিশ। পরে তা নিয়ে দফারফার ঘটনায় ঘটার খবরে নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। স্থানীয় ভাবে বসে উপজেলা আইন-শৃংখলা বাহিনীর বৈঠক।
সীমান্তের গডফাদার ওরা ৩ জন: সীমান্তের চোরোচালানের গডফাদার হিসাবে উঠে এসেছে জৈন্তাপুরের ইসমাইল আলী, আব্দুল করিমের নাম। শিব্বির আহমদের নাম। ইসমাইল জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরবাগ মল্লিপুরের বাসিন্দা। সীমান্তের ওপারেও তার নিজস্ব একটি বাহিনী রয়েছে। তার মূল কাজ চোরাচালানের টাকা হুন্ডি মাধ্যমে পাঠানো। এর আগে ভারতে টাকা পাচারের করতে গিয়ে ১১ লাখ টাকাও ৩ সহযোগী আব্দুল্লাহ শিপনসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন ইসমাইল। সীমান্তে ইসমাইলের বাহিনীর সাংকেতিক নাম ‘আরএস’ বাহিনী।
অপরদিকে চোরাচালানের রাজ্যের আরেক মুকুটহীন স¤্রাট। আব্দুল করিম। বাড়ি সীমান্ত রাজ্য জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের ঘিলাতৈল গ্রামে। পিতার নাম মছদ্দর আলী। অবশ্য আবদুল করিম নাম বললে কারো সাধ্য নেই লোকটিকে চেনার। বিশেষণ হিসেবেনামের আগে যুক্ত করতে হবে বেন্ডটিস। অর্থ্যাৎ বেন্ডটিস করিম।এই নামেই জৈন্তার চোরাচালান রাজ্যের সাথে মিশে গেছে নামটি। তাঁর নেই কোনো প্রতিদ্ব›িদ্ব। এদিকে কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন বায়মপুর গ্রামের শওকত আলীর পুত্র শিব্বির আহমদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এ উপজেলায় ২০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা ৬ নং সদর ইউপির চাউরা(কান্দেপুর) গ্রামের নূর আহমদের ছেলে রুবেল আহমদ।
জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা: শুধুমাত্র সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত ৮৬ জনের নামের একটি তালিকা করেছে। এই তালিকায় বিজিবি-ডিবি, থানা পুলিশের নিয়োজিত সোর্স-লাইনম্যান,সাবেক-বর্তমান জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের নামও উঠে আসে। তারা হলো, জৈন্তাপুরের কেন্দ্রী গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে রুবেল আহমদ (বিজিবি’র সোর্স), একই গ্রামের তেরা মিয়ার ছেলে আহমদ আলী, আসামপাড়ার সৈয়দ আলীর ছেলে রাশিদ আলী, মাস্তিংহাটি’র আলতাফ মিয়ার ছেলে ইসলাম উদ্দিন, কদমখালের কালা মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন, আলু বাগানের টেম্বল মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া, একই গ্রামের সৈয়দ জহিরের ছেলে সৈয়দ মাসুম, গৌরী শংকর এলাকার তফন মিয়ার আব্দুল্লাহ, গোয়াইঘাটের পাঁচ সেউতি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সুহেল আহমদ, কালিঞ্জিবাড়ী’র মালিক, আলু বাগানের (মোকামবাড়ি) আং লতিফের ছেলে সৈয়দ রাজু, একই এলাকার সৈয়দ মিজান, আলু বাগানের ছন্দাই মেম্বারের বাড়ি’র লোকমান হোসেন চৌধুরী, হেমু গ্রামের আব্দুর রফিকের ছেলে হাজী মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই হোসেন আলী, বালিপাড়া’র সমছুল আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম, কানাইঘাট দূর্গাপুরের ইলিয়াছ আলীর ছেলে আলকাছ মিয়া, জৈন্তাপুরের কান্দিগ্রামের মতছির আলীর ছেলে রিয়াজ আহমদ, বালিপাড়ার নয়াখেল গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহজাহান, একই এলাকার সফর আলীর ছেলে আলমগীর, কানাইঘাটের বড়বন্দ ১ম খন্ডের ইলিয়াস আলীর ছেলে শাহজাহান, বড়বন্দ ৪র্থ খন্ডের আশিক, একই কানাইঘাটের সিঙ্গারীপাড়ার আব্দুল হাসিমের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য নুর আহমদ, কান্দিগ্রামের রকিব আলী ছেলে আব্দুল হাই, জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর এলাকার মৃত মস্তকিনের ছেলে হারুন মিয়া, সুলেমান আহমদ (মৃত), আব্দুল হান্নান পটল, গৌরীশংকর গ্রামের প্রকাশ হাওলাদারের ছেলে নাজমুল ইসলাম মুন্নি, নিজপাটা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি ঘিলাতৈলের মৃত হাছন আলীর ছেলে মনসুর আহমদ, তার ভাই মনা আহমদ, একই এলাকার সামছুল ইসলাম, নিজপাটা তেয়াসীহাটি’র আরিফ আহমদ, মাজিহাটি’র সিদ্দিক আহমদ, লামাশ্যামপুরের মুছা মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন, নিশ্চিন্তপুরের নুর উদ্দিন মাষ্টারের ছেলে সেলিম আহমদ (বিজিবি’র সোর্স), লাল জৈন্তাপুরের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো: জালাল উদ্দিন, ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক বহিস্কৃত চেয়ারম্যান মো.রফিক আহমদ, হেমু ভাটিপাড়ার মো: ইয়াহইয়া, হেমু মাঝরচুলের বিলাল, মানিকপাড়ার বিলাল আহমদ, ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিক আহমদ, হেমু গ্রামের হেলাল আহমদ, হরিপুরের আব্দুল মালিক ওরফে মালিক হাজী’র ছেলে সুফিয়ার, হেলিরাই এলাকার আবুল হোসেন, কালিঞ্জিবাড়ী’র মো: রহিম উদ্দিন (বিজিবি’র সোর্স), ডিবি’র হাওর-এর ফরিদ আহমদ ও গফুর মিয়া, গৌরীশংকর গ্রামের লাল মিয়া ওরফে লালা ও তার ছেলে পারভেজ, জৈন্তাপুর উপজেলার পাখিবিল গ্রামের আলী আহমদ, আবুল খয়ের, টিপরাখলা গ্রামের শাহীন আহমদ ও আমিন, গৌরীশংকর এলাকার ডালিম, কেন্দ্রী গ্রামের মো: আজাদ মিয়া, ৪নং বাংলাবাজারের বারেক, কেন্দ্রী গ্রামের বেলু ও জিতু (হিন্দু পরিবার), আসামপাড়ার মতিন, বিলাল ও কাশেম, গুচ্ছগ্রামের এরশাদ ও দিলিপ, লামাশ্যামপুরের স্বপন মোল্লা ওরফে সোবহান মোল্লা।এছাড়া মোস্ট ওয়ানটেড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, ঘিলাতৈল গ্রামের আব্দুল করিম ওরফে ব্রান্ডিজ করিম, রুপক রায় ওরফে ঢাকাইয়া রুপক, হরিপুরের রফিক আহমদ উরফে লোদাই হাজী, আলু বাগানের কবিরাজ ফারুক, কেন্দ্রিগ্রামের মিজান আহমদ রুবেল, আনোয়ার হোসেন, রাম কিশ্বাস, শ্রমিকনেতা সাইফুল ইসলাম, আলী আকবর, হেলাল উদ্দিন, ইমরান হোসেন, সোহেল আহমদ, ইউনুছ মিয়া, গুলজার মিয়া, আব্দুল করিম, আব্দুল্লাহ মিয়া, লালা মিয়া, পারভেজ মিয়া, নজরুল ইসলাম নজাই, নাজিম মিয়াসহ আরো অনেকই চোরাচালানির সাথে জড়িত।
অনুসন্ধানে জানা যায় : জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের সিঙ্গারীরপাড়, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা, আফিফা-নগর চা বাগান, বাঘছড়া, তুমইর, জঙ্গীবিল, লালাখাল চা বাগান, লালাখাল গ্রান্ড ও নিজপাট ইউনিয়নের কালিঞ্জিবাড়ী, জালিয়াখলা, হর্নি, বাইরাখেল, লালাখাল রিসোর্স সেন্টার এলাকা, নয়াগ্রাম, মাঝরবিল, গোয়াবাড়ী, টিপরাখলা, ফুলবাড়ী, মহিষমারা, কমলাবাড়ী, ঘিলাতৈল, খলারবন্দ, আতাউরের বাগান, ডিবির হাওর, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী বিল, কেন্দ্রী হাওর, কাঁঠালবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, মিনাটিলা, ছাগল খাউরী, আসামপাড়া, আদর্শগ্রাম, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আলুবাগান, নলজুরীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন চোরাচালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত বছরের ১৫ই জুলাই সিলেটের শাহ্পরান থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলীর ছেলে জাফর সাদেক জয় আলী, লিয়াকতের ভাই ইসমাঈল আলীর ছেলে আক্তার হোসেন ও গাড়ির ড্রাইভার লিমন মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক প্রিমিও গাড়িসহ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ১শ’টি দামি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে লিয়াকত আলীর ছেলে জয় স্বীকার করে, তার পিতা লিয়াকত আলী তার গাড়িতে করে এই ৩ জনকে দিয়ে মোবাইলগুলো পাঠিয়েছেন সিলেট শহরের করিমউল্লাহ মার্কেটের শিপলুর কাছে। এই তিন উপজেলার সীমান্তে প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স-লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে প্রায় ২০ লক্ষাধীক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলার গৈায়াইনঘাট এবং জৈন্তাপুর সীমান্তে পুলিশের নামে চোরাচালানের টাকা তুলে সামছু মিয়া। আর বিজিবির নামে টাকা উত্তোলন লন্ডনী বাজারের হানিফ মিয়া।
৪৫০ পড়েছেন