• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

একনেকে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪০.৫৮ কোটি টাকা

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
একনেকে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪০.৫৮ কোটি টাকা

Sharing is caring!

সিলেট এইজ ডেস্ক: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের জন্য এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের জন্য ৫ হাজার ৬৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈঠকে মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মোট আনুমানিক ব্যয় ১০ হাজার ৬৪০.৫৮ কোটি টাকা। ‘মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ৭ হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসাবে ২ হাজার ৮৮০ কোটি ১৮ লাখ টাকা পাওয়া যাবে।’ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুমোদিত ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন এবং পাঁচটি সংশোধিত প্রকল্প। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড রোড নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-মিঠামইন সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত হাওর অঞ্চলে মিঠামইন সেনানিবাসের সাথে সংযোগকারী সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ সদর, ঢাকা, সিলেট ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ মসৃণ ও চালু রাখতে নাকভাঙ্গা সার্কেল থেকে মরিচখালী বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে। মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ১৫.১৩ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ, ১৩.৪০ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ, চারটি সেতু নির্মাণ, ১৩টি টোল প্লাজা নির্মাণ, টোল মনিটরিং ভবন ও চেকপোস্ট নির্মাণ, ১৩ কিলোমিটার অস্থায়ী সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণ, চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন, চারটি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ, ৪০ হাজার ৪৬৮ বর্গমিটার নির্মাণ ইয়ার্ড, ৮ হাজার ২২৪ বর্গমিটার বাস স্টপস এবং ১৫১.০৯ একর জমি অধিগ্রহণ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কাজের গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী সংস্থাগুলোকে আবারও নির্দেশ দিয়েছেন। মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও ব্যয় করার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করার ওপর জোর দেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পাশাপাশি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার প্রধান দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সকলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং পাশাপাশি অন্যদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ দিনের একনেক বৈঠকের আগে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়, যা সকলের প্রশংসাও পায়।
বৈঠকের আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রকল্প উত্থাপন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মান্নান বলেন, প্রকল্পটি আলোচনার তালিকায় ছিল না বা প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানতে চাননি। তিনি আরও বলেন, ‘তবে, খসড়া প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং এটি আরও অগ্রগতি হলে আপনারা এটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।’
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই দেশের অর্থনৈতিক শক্তি পরিমাপ করার একমাত্র বিষয় নয়, বরং অন্যান্য সূচক যেমন-আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং সরকারি ঋণ গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এসিইউ পেমেন্টের পর ১১ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২.৫১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ২ বিলিয়ন ডলার বেশি ছিল (অর্থবছর২৩) (অর্থবছর২২)।
এছাড়াও, এই সময়ে আগত রেমিট্যান্সও ১০.৪৯ বিলিয়ন বেশি ছিল এবং পাশাপাশি উচ্চ এফডিআই ছিল। ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেশটি খুব বেশি প্রভাবিত করবে না’-উল্লেখ করে আলম বলেন, ‘রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে, ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে বলে সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। তাই, রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতিও কমছে।’
ড. আলম বলেন, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারকে প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি হিসেবে বিশাল বরাদ্দ রাখতে হয়, যার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল্য সমন্বয় করতে হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাপ সত্ত্বেও সারের মতো কৃষি উপকরণে কোনো মূল্যবৃদ্ধি বা সমন্বয় করা হয়নি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘আশ্রয়ণ’ নিয়ে গভীরভাবে সমীক্ষা চালিয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। বৈঠকের শুরুতেই একনেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করায় উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার যা কিছু হাইলাইট করে তা তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এবং তাতে বাড়াবাড়ির কিছু নেই। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বৈঠকে অবহিত করা হয় যে, গত ছয় মাসে একনেকে ১.৬৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্পসমূহ অনুমোদিত হয়েছে এবং এই প্রকল্পগুলো আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হল: পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে “চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে মাল্টিপারপাস হাইড্রলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ” প্রকল্প; “বরিশাল জেলার কারখানা, বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা (১ম পর্যায়)” প্রকল্প এবং “ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ (১ম সংশোধিত)” প্রকল্প; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের “বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় ছোট দ্বীপ এবং নদীর চরের জন্য অভিযোজন উদ্যোগ” প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প যথাক্রমে-“মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ (সওজ অংশ) (২য় সংশোধিত)” প্রকল্প; “কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ (২য় সংশোধিত)” প্রকল্প এবং “কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর হতে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিখালি পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ” প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস এন্ড সেফটি সিস্টেম এন্ড ইন্টিগ্রিটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএনএস (৩য় সংশোধিত)” প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে “বাংলাদেশের ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন (জিওবি-এআইআইবি)” প্রকল্প এবং ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপ্টেড আরবার ডেভলপমেন্ট ফেইজ টু (সিসিএইউডি)-খুলনা’ প্রকল্প; বিদ্যুৎ বিভাগের “ঘোড়াশাল ৪র্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং (২য় সংশোধিত)” প্রকল্প। বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

৪৪৯ পড়েছেন