Sharing is caring!
আব্দুল হালিম সাগর বিশেষ প্রতিবেদন: সামনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন । এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী নিয়ে থেমন সাড়াশব্ধ শুনা না গেলেও সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য দলীয় মনোনিত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি বেড়েই চলছে। তবে তিনি এখনো দলীয় কোন সিদ্ধান্ত না পেলে নিজেকে আওয়ামী রীগের প্রার্থী হিসাবে প্রচারণায় মাঠে নেমছেন। সাথে নেই মহানগর আওয়ামী লীগের বড় কোন নেতা। বিষয়টি নিয়ে এতোদিন চাপাক্ষোভ বিরাজ করলেও সম্প্রতি সেই বিরোধ দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য। ইতিমধ্যে ফাটল দেখা দিয়ে দিছে দলের মধ্যে। এতেদিন সেই বিরোধ ছিল ভেতরে-ভেতরে ও অপ্রকাশ্যে। তবে এবার প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে বিরোধের রুপ রেখা। এক কথায় সিসিক নির্বাচনের আগেই প্রার্থী নিয়ে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাহলে কি আবারও সিসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি আসন্ন। এদিকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল যদিও তিনি সিলেটের দায়িত্বে নেই,তার সাথে আছেন সদ্য কেন্দ্র কমিটির সদস্য হওয়া সাবেক মহিলা সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। এই দুই জন বেশ কোমর বেধেঁ নেমেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধরীর পক্ষে প্রচারনায়। তবে দলের একটি অংশের দাবি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নাকি সিলেট সিটিতে আনোয়ারুজ্জামানের প্রার্থিতার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। তবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি করছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন কোন নির্দেশনা এখনো দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার করছেন এই তিনজন।
সবুজ সংকেত পেয়ে নাকি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত মাসের ২২ তারিখে দেশে এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী তাকে সিলেট সিটিতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতাও প্রধানমন্ত্রী এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করছেন। তাই দেশে আসার পর থেকেই সিলেট নগরে জনসংযোগ শুরু করেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এদিকে আনোয়ারুজ্জামানের প্রার্থিতার খবরে শুরু থেকে সিলেট আওয়ামী লীগে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ্য চলে এসেছে। সিলেট আওয়ামী লীগের অন্তত ৭ জন নেতা এই সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন দীর্ঘ দিন থেকে। মাঠে থেকে দলের জন্য কাজ করে গেছেন বিরামহীন ভাবে। চালিয়েছেন জনসংযোগ প্রচার প্রচারনা। তাদের ক্ষোভ এতদিন ভেতরে-ভেতরে থাকলেও এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তাদের ভাষায় আমরা মাঠে থেকে দলের জন্য কাজ করছি আর হঠাৎ করে আনোয়ারুজ্জামান উড়ে এসে জুড়ে বসে যাবেন তা কখনো মেনে নেওয়া হবেনা। তাহলে দলের ত্যাগীদের মূল্যয়ন কোথায়?
গত সোমবার নগরীতে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে আছি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে নৌকার কাÐারি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সিটিকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরে আমরা একসাথে কাজ করে যাবো। শফিউল আলম নাদেল সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও বাড়ি সিলেটে হওয়ায় তিনি এখানকার রাজনীতিতেও সক্রিয়। আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে তার আগের দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন সাক্ষরিত এই বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘সোমবার সিটি কর্পোরেশনের কোনো একটি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট সিটি মেয়র নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা মহানগর আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমরা পাইনি। অতএব ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগরের শৃংঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ানো হয় সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ বিষয়ে আহবান জানানো যাচ্ছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের এই বিবৃতি প্রসঙ্গে মঙ্গলবার আনোয়ারুজামান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, আমি দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেয়েই দেশে এসেছি। হাইকমান্ড থেকে আমাকে সিলেট নগরে কাজ করতে বলা হয়েছে। সিলেট আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই আমার সাথে আছেন।
এ ব্যাপারে শফিউল আলম নাদেলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল ধরেননি। এই বিবৃতি প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার বলেন, দলের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের দলীয় শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। দলীয় প্রধান বা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে প্রার্থী হিসেবে কারো নাম ঘোষণা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কাউকে প্রার্থী হিসেবে দাবি বা প্রচার করতে পারি না। এতে কর্মীরাও বিভ্রান্ত হতে পারেন। সব দায়িত্বশীলদের শংঙ্খলা মেনে চলা উচিত। এরআগে গত ২ ফেব্রæয়ারি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে, ‘দলীয় শৃংঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ব্যতিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে কর্ণপাত না করা এবং নিজেদেরকে জড়িত না করার জন্য আহবান জানানো হয়’।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের ছোট ভাই একই কমিটির সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো.জাকির হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের আনোয়ারুজ্জামান ঘনিষ্ঠ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহানগর কমিটির অনেক নেতা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তারা আনোয়ারুজামান চৌধুরীর বিরোধিতা করছেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন বলেন, যারা দেশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতি করছেন, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে রয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে প্রবাসে বিলাসী জীবন কাটানো কাউকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়াটা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’ আবারও সেই আগের মতো সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশংঙ্কা বৃদ্ধমান। এদিকে শুরুতেই আওয়ামীলীগের প্রার্থী নিয়ে বিরোধ দেখা দেওয়ায় বেশ ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
৬৮৪ পড়েছেন