• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট বিআরটিএ দূর্নীতির হেরেমখানা :দুই কর্মকর্তা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন

admin
প্রকাশিত মার্চ ২০, ২০২৩
সিলেট বিআরটিএ দূর্নীতির হেরেমখানা :দুই কর্মকর্তা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট বিআরটিএ অফিস নিয়ে বির্তকের শেষ নেই। দূর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য যেনো ওপেন সিক্রেট। সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি করে রেখেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা আর দালাল সিন্ডিকেট। দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রিয়াজুল ইসলাম এবং মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের মালিকানা বদলিসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণকালে নানা অজুহাতে মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি করে ওপেন ঘুষের দোকান খুলে বসেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে সিলেটের এসএমপি পুলিশ কমিশনার ও মেট্রোআরটিসির সভাপতি সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজিচালিত অটেরিকশার সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২টি। তন্মধ্যে ১০,০১২ সিলেট-থ-১১, ১০,০১২ থেকে সিলেট-থ-১২ সিরিয়াল এবং ১০,০১৩ থেকে সিলেট-থ-১৩ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক অটোরিকশা মেট্রো এলাকার বাইরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অর্থাৎ সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করা হয়েছে। গত বছরের (২০২২ সাল) ২ অক্টোবর মেট্রো আরটিসির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশার মালিকরা মেট্রো ঠিকানায় বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছেন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রিয়াজুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি অটোরিকশা থেকে ৫০/৬০ হাজার নিয়ে এমআরটিসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অবৈধভাবে মালিকানা বদলি করে দিচ্ছেন অনায়াসে। মাত্র দুই মাসে প্রায় ৫৫টি অটোরিকশার মালিকানা বদলি জেলা থেকে মেট্রোতে করার বিষয়টি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট-থ-১১ সিরিয়ালের ২১টি ও সিলেট-থ-১২ ডিজিটের নাম্বার প্লেটের ৩৪টি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রতিটি থেকে প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনৈতিক সুবিধা নিতে প্রায় ১৮ বছর আগের পুরোনো সিলেট-থ ১১ নাম্বার প্লেটের অটোরিকশার মালিকানা বদলি করা হয়েছে। বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিকরা গত বছরের ৯ এপ্রিল ধর্মঘটের ডাক দেয়। যদিও প্রশাসনের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যেই ওই বছরের ১২ এপ্রিল বিআরটিএ সাবেক সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) বদলি হন। আর সেই সুযোগে সহকারী পরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান রিয়াজুল ইসলাম।অথচ তিনি চলতি দায়িত্ব না লিখে নেমপ্লেটসহ সরকারি দফতরগুলোতে পত্র আদান-প্রদানে সরাসরি সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) লিখে থাকেন। যা সরকারি চাকরির বিধিপরিপন্থি।
এদিকে সিলেট পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এবং সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ওই তিন কর্মকর্তাদের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা ওই কর্মকর্তাদের বদলির দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাহকরা বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় মালিকানা বদলিসহ রেজিস্ট্রেশন দিতে সহকারী পরিচালক তার অনুগত কর্মচারী ইসমাইল হোসেনকে রেজিস্ট্রেশন শাখায় নিয়ে আসেন। এই ইসমাইল হোসেন নিজেও সহকারী পরিচালকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক অটোরিকশা অনৈতিকভাবে মালিকানা বদলি করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেনবিআরটিএ সিলেট সার্কেলের এ কর্মকর্তাদের নামে দালালরা সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করে উৎকোচ আদায় করে থাকেন। তারা তিনজনে মিলে অটোরিকশার নিবন্ধনের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনা হাতে নিলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এ প্রক্রিয়া প্রতিহত করেন।
এদিকে সিলেট বিআরটিএ সার্কেল’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রিয়াজুল ইসলাম ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার (২০মার্চ) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মো.ময়নুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন, সহ সাধরণ সম্পাদক মো.মাহবুব মিয়া (মবু),সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাছনাত, কোষাধ্যক্ষ আব্দস শহিদ, সদস্য সাহেদ আহমদ, সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ দেলোয়ার হোসেন, শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং ৭০৭ সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন, থ্রী হুইলার শ্রমিক ইউনিয়ন অটো টেম্পু অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ও সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন উপকমিটির নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিআরটিএ একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের জন্য এই দুই কর্মকর্তা বেমালুম ভ‚লে গেছেন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তারা টাকার মোহে নীতি নৈতিকথা, বিধিবিধান উপেক্ষা করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহিতাদের সাথে দুব্যবহারের কারণে এই মর্যাদার প্রতিষ্ঠানটি এখন যেন কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। মানববন্ধন পরবর্তীতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলাম ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীর প্রত্যাহার জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

৪৫১ পড়েছেন