• ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে সক্রিয় চোর ও ছিনতাইকারী চক্র : থানায় গেলে মামলার বদলে হয় জিডি

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ৯, ২০২৩
সিলেটে সক্রিয় চোর ও ছিনতাইকারী চক্র : থানায় গেলে মামলার বদলে হয় জিডি

নগরীতে সক্রিয় চোর ও ছিনতাইকারীরা দল বেধে মহড়া দেয় বন্দর বাজারে, চুরির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে মামলার বদলে হয় জিডি।

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিবেদন: ছিনতাই-চুরি সিলেট নগরীতে এখন প্রতিদিনের ঘটনা। ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ। পথ আগলে যাত্রীর সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। সিলেট নগরীর ছিনতাইয়ের স্পট কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হচ্ছে মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টার মধ্যে। আর চুরির ঘটনা শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। ছিনতাইকারীরা ওই সময়কে টার্গেট করে রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং ছিনতাই করছে নিয়মিত। ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। সিলেট কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক মাস আগে দক্ষিণ সুরমায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন এক এনজিও কর্মকর্তা। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার করলেও এলাকায় ছিনতাই কমছে না। এক্ষেত্রে কদমতলী ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যদের দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। হুমায়ূন রশীদ চত্বর, কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কদমতলী বাস টার্মিনাল ও প্রবেশমুখ হুমায়ূন রশীদ চত্বরে কয়েকটি ছিনতাই পার্টি রয়েছে। এসব ছিনতাই পার্টির সঙ্গে ফাঁড়ি পুলিশের সখ্যতা রয়েছে। এ কারণে গত ১০-১২ দিনে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি ওসি হিসেবে যোগদানের পর সরব হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো.শামসুদ্দোহা। গত কয়েকদিনে প্রায় ২৪ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকে দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকা অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মাদক বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার পরেই হচ্ছে নগরীর উত্তর সুরমার উপশহর গলির মুখ, সুবহানীঘাট, ধোপাদিঘীরপাড়, বন্দরবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীদের সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা হচ্ছে নগরীর কাস্টঘর কেন্দ্রীক ছিনতাইকারী চক্র। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান খুনের ঘটনার পর ওই এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ঘটনা কমে গিয়েছিলো। পুলিশি শেল্টারে থাকা অপরাধীরা গা-ঢাকা দিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে ওই এলাকার ছিনতাইকারীরা। যদিও কতোয়ালী থানা ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে আটক করেছে। তবে ইদানিং সবজির খুচরা বিক্রেতা সেহরি খেয়েই বাজারমুখী হলেই ধোপাদিঘীরপাড়, সুবহানীঘাট পাম্পের সামনে এলাকায় ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের। কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এরপরও মধ্যরাত থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ভয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। সুবহানীঘাট ফাঁড়ি পুলিশের কয়েক সদস্য ঘুরেফিরে দীর্ঘদিন ধরে একই ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারণে তাদের সঙ্গে অপরাধীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে ফাঁড়ির অদূরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এতে করে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নগরীর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় রয়েছে ভাসমান ছিনতাই চক্র। ভোররাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে তারা। কীনব্রিজ, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, কোর্টপয়েন্ট, তালতলা এলাকায় তারা অবস্থান করে।
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুদীপ দাস জানান, ছিনতাই, চুরি রোধে পুলিশ বিশেষ টহল দিচ্ছে। উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নগরে ভোর বেলা টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্গে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ থাকছে। এ ছাড়া নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। পথচারীরা যাতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ঈদ ঘনিয়ে এলে নগরের মোড়ে মোড়ে ও মার্কেটে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তবে-এখন থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দল বেঁধে কয়েকজন কিশোর, যুবক নামেন পথচারীদের মোবাইল চুরির মিশন নিয়ে। শুধু বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সোবহান ঘাট, সুরমা পয়েন্ট, টার্মিনাল এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০ টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ চুরির মামলা না নিয়ে, বলে হারানোর জিডি করতে। বিগত এক বছরে শুধু কতোয়ালী থানায় প্রায় হাজার খানেক জিডি হয়েছে। কিন্তু চোরাই হওয়া মোবাইল উদ্ধার হয় না কখনো। জিডি পড়ে থাকে মাসের পর মাস, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ করলে পাওয়া যায় না কোন সুদউত্তর। এদিকে মোবাইল চুরদের নিরাপদ ঘাটি সিলেট নগরীর কাষ্টঘর এলাকার জেল কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত বাস ভবনগুলো। যদিও গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে পুলিশ আটক করেছে। আটক করা হয়েছিলো চুরদের গডফাদার মৌলভীবাজারের (বর্তমান দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর জৈনপুরের) বাসিন্ধা গডফাদার শহিদকে। কিন্তু মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কতোয়ালী থানার এস.আই মিজানের দায়িত্বহীনতার টাকার খেলায় আদালত থেকে ছাড়া পায় শহীদ। সম্প্রতি মোবাইল চুরির সংখ্যা আবারও বেড়ে গেছে সিলেট নগরীতে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট অভিযান লক্ষ করা যাচ্ছেনা বলে ভোক্তভোগীদের অভিযোগ।

৬৩৫ পড়েছেন