• ১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সিসিক নির্বাচন : চুপ থাকা যখন দায় !

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ১৫, ২০২৩
সিসিক নির্বাচন : চুপ থাকা যখন দায় !

Sharing is caring!

মন্তব্য কলাম: আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচন ২০২৩ ইং । এভারের ভোট হবে ইভিএমএ। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা বসানো। ব্যতিক্রম ধর্মী এক নির্বাচন দেখবে নগরবাসী। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন প্রায় ১০ জন হেভিয়েট নেতা । কিন্তু সকলকে টেক্কা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে গেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাঁর বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় । এর আগে সিলেট-২ আসনে এমপি হিসাবে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন, যদিও শফিকুর রহমান চৌধুরী সেবার মনোনয়ন পান। আনোয়ারুজ্জামান অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার একজন পরিক্ষিত সৈনিক, রাজনীতির মাঠে বিচরন রয়েছে তার। বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পক্শে মাঠে কাজ করলে,তিনি কিন্তু ভোটের মাঠের রাজনীতিতে এবার নবাগত। এটাই তার জীবনের প্রথম নির্বাচন। অপর দিকে দল ছেড়ে কৌশলী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনী মাঠে যার রয়েছে টানা দুই বারের মেয়র পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা।এক কথায় মাঠের পাকা একজন খেলোয়াড় আরিফুল হক চৌধুরী। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন সাবেক মেয়র ‘জনতার কামরান’।প্রয়াত নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর পর আওয়ামীলীগে আরিফুল হকের সাথে ভোটের মাঠে লড়াই করার জন্য তৈরী ছিলেন অনেকে। তাদের মধ্যে আসাদ উদ্দিন আহমদ আর আজাদুর রহমান আজাদ অন্যতম এবং আলোচনায়। বিগত নির্বাচনে কামরানের পাশাপাশি এই দুইজনও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন।

সেই সময় নেত্রী আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আজাদুর রহমান আজাদকে শান্তনা দিয়ে কিছু একটা বলে ছিলেন। দুজনকেই কামরানের পক্ষে কাজ করতে বলে ছিলেন তিনি। আসাদ উদ্দিন আজাদুর রহমান নেত্রীর নির্দেশ পালন করে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেক ইদুর গর্ত করে রেখেছিলো,যা তারা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। ফলে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিলো কামরানকে। বঙ্গবন্ধু আদর্শের একজন সৈনিক হিসাবে সেদিন মনে অজান্তে কান্না করেছিলাম, নিজ কর্মস্থলে বসে। একজন কলম সৈনিক হিসাবে ব্যক্তিগত একটি গভির সম্পর্ক ছিলো কামরান সাহেবের সাথে। একজন সাদামনের মানুষের সাথে কত সুন্দর নিখোঁত বেইমানীর দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। সে দিন কামরান সাহেবের চোখের পানিতে ছিলো অভিসাপ, যে সাপে আজ নিজেদেরকে কামড় দিয়েছে । সেই তো সামান্য দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার জন্য সুন্দর ভাবে কামরানের সাথে থেকেও বেইমানি করেছিলেন। এবার তাদের অনেকের খাশেষ ছিলো নগর পিতা হবার। সেটা আর পুরন হলোনা। আনোয়ারুজ্জামান গুড়ে বালি ঢেলে দিলেন।

তবে সজাগ থাকতে হবে সে সব মানুষ গুলো থেকে, যারা কামরানের সাথে বেইমানি করেছিলেন নৌকা নৌকা বলে। আর রাতে আরিফের টাকায় হোটেলে বসে মিটিং করেছিলেন মোরগ পোড়া খেয়ে। কিন্তু আসাদ ও আজাদকে দেওয়া সে কথা নেত্রী রাখতে পারলেন না প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য। কিন্তু আজাদ-আসাদ কখনো বেইমানি করেননি কামরানের সাথে। যেটি কামরান সাহেব নিজে বলে ছিলেন।

সূত্রমতে বিভিন্ন গোয়েন্ধা সংস্থাসহ সিটিএসবির রির্পোট-ই আনোয়ারুজ্জামানের ভাগ্য খোলে এবার । আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোন রকম অভিযোগ ছিলোনা গোয়েন্ধা রির্পোটে । কিন্তু বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের যে দশজন মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাদের বলয় বা তারা কি ভাবছেন সিসিক নির্বাচন নিয়ে। তা বুঝা যাবে নির্বাচনের আগের দিন অথবা রাতে । পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে একটি প্রশ্ন জাগে মনে, প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মতো একজন সাদা মনের মানুষের সাথে যেমনটি হয়েছিলো সেই দশা কি হবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে । দিনে আনোয়ারুজ্জামান আর রাতে আরিফুল হক, এমনটা কি হবে এবারের নির্বাচনে? নাকি সকল বেধাবেধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিসিকের হারানো নগর পিতার আসরটি উদ্ধার করবে আওয়ামী লীগ। যদিও প্রথম দিকে আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন করবেনা এমনটা শুনা গেলে অনেকে ফাঁকা মাঠে গোল দেবার স্বপ্ন দেখে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক নির্বাচন করবেন জনগনের আরিফ হয়ে। এমনটা আভাস আজ রাতেই পাওয়া গেলো। তাহলে ফাঁকা মাঠে গোল দেবার স্বপ্ন শেষ। এখন হবে ভোটের লড়াই।
একটি জরিপ মতে সিসিকের আসন বর্ধিত করার পূর্বে সিলেটে বাড়ী বা স্থায়ী বাসিন্ধা নন এমন ভোটার সংখ্যা ছিলো প্রায় ৭০ হাজার। যা কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী ভাগাভাগি করে পেতেন। কারণ সেই ভোট নিজের দিকে টানতে তাদের স্ত্রীরা বড় নিয়ামক হয়ে কাজ করতেন। কারন দুজনের পিতার বাড়ি ছিলো সিলেটের বাহিরে। এবার সিসিকের আরো ১২টি ওয়ার্ড বর্ধিত হয়েছে। ভোটার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অনুপাতে সেই ভোটার সংখ্যা লাখের কাছাকাছি। আরিফুল হকের মতো কি পারবেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সেই ভোটে ভাগ বসাতে এমন প্রশ্ন থেকে যায়? যদিও আরিফুল হক নগর উন্নয়ন করতে গিয়ে অনেকের চক্ষুশুলে পরিনত হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা কোন কাজেই আসবেনা ।আরিফুল হক নির্বাচনী মাঠের একজন পাক্কা খেলোয়াড়। কারন কাউন্সিলর থেকে নগর পিতার আসনে বসেছেন ভোটের মাঠে লড়াই করে। এক সময় কামরানের বিকল্প আরিফুল হক হলেও সময়ের সাথে সাথে আরিফুলের বিকল্প হয়ে উঠেন কামরান। কিন্তু এবার আরিফুলের বিকল্প একজন প্রবাসী। তাই আরিফুল হক নির্বাচন করলে বৈতরনী পার হওয়া তার জন্য অনেকটা সহজ হবে। কারন আরিফুল হক জানেন কোন ফুলে কোন দেবতা তুষ্ট হন। সেই প্রন্তা বেঁচে নিতে তিনি ভুল করবেন না।

এদিকে আনোয়ারজ্জামান চৌধুরীর সাথে যে সকল নেতা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা সকলেই ছিলেন, মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়। জেল জুলুম, কারাভোগ করেছেন দলের জন্য। তাই সময়ের পরিক্রমায় তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বলয় রয়েছে। যদি সেই সকল নেতা নিশ্চুপ হয়ে যান, তা হলে তাদের সেই সব বলয় নিষ্কিয় হয়ে যাবে মাঠে। যদিও  নেতার নির্দেশ না পেলে দায়সারা কর্মী হিসাবে থাকবে তারা মাঠে। ফলে সেই প্রভাব পড়বে ভোটের মাঠে। কামরানের দশা হবে আনোয়ারুজ্জামানের ভাগ্যে ।

যদিও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আজই বলেছেন সকল দলীয় ও ব্যক্তিগত বেধাবেধ ভুলে সকল নেতাকর্মীরা নৌকার হয়ে কাজ করবে। নৌকা আমার নয়, এটি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকা। কিন্তু আমরা সংবাদকর্মী হিসাবে পূর্বে অভিজ্ঞতার কথা এতো সহজে ভুলে যাই কি করে। নৌকার ব্যাজ দিয়ে ধানে শীল মারা নিজ চোখে দেখা স্মৃতি। আর বিকাল ৩ টার আগে জিন্দাবাজারের পাঁচভাই রেষ্টুরেন্টে মেয়র প্রার্থী কামরানকে নিয়ে ভূরি ভোজের পর বাসায় ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার কথাগুলো এতো সহজে কি ভুলা যায়। তবে শেষ অবধি লড়াইটা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা অনুমান করা যাবে ভোটের দু/একদিন আগেই । সেই পর্যন্ত আমরা দর্শক হিসাবে অপেক্ষায় থাকলাম।
——————————————————–
আব্দুল হালিম সাগর লেখক ও সাংবাদিক : ব্যুরোচীফ: দি ডেইলী এশিয়ান এইজ ও দৈনিক সকালের সময়।

৫৯৪ পড়েছেন