Sharing is caring!
সিলেট এইজ : গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অগ্রনী ব্যাংকের নামে প্রতারণা করে মাজেদা বেগম নামের এক মহিলার প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মামার দোকান ও জাফলং বাজারের হাসান জুয়েলার্সের মালিক জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগী এনাম আহমদ। এই দুই প্রতারকের মধ্যে জসিম উদ্দিনের বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ নাম্বারে, সে ঐ এলাকার আজিহ মিয়া ও জোসনা বেগমের ছেলে ও তার অপর সহযোগী এনাম আহমদের বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতারখাই গ্রামে।
বিগত ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতারক জসিম উদ্দিন ও এনাম মিলে মাজেদা বেগমকে ধর্মের মা বানিয়ে জাফলং অগ্রণী ব্যাংক শাখার কিছু জাল জমা রিসিট দিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে ব্যাংকের জমা রিসিটের নামে নিজেরাই বানিয়ে দিয়েছে ব্যাংকের হুবুহু জমা রিসিট, সিল ও ম্যানেজারে সাক্ষর। এ রকম জাল জমা রিসিটের কাগজ মাজেদার কাছে রয়েছে। যে গুলো নিয়ে পাওনা টাকা উদ্ধারের আশায় এখন মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জসিম ও এনাম মিলে মাজেদা বেগমকে লোভ দেখা জাফলং অগ্রণী ব্যাংক শাখা একটি বিশেষ সুবিধা চালু করেছে। যে তিন বছরে জন্য ১০ লাখ বা ২০ লাখ টাকা ঐ ব্যাংকে জমা রাখলে ৩ বছর মেয়াদ পরে দ্বিগুন টাকা দিচ্ছে গ্রাহক কে। জসিম ও এনামের তাদের কথায় সহজ সরল মাজেদা বেগম নিজের একটি সিএনজি বিক্রি করে এবং গ্রামীন ব্যাংক, আশা ব্যাংকসহ এলাকার বিভিন্ন সমিতি থেকে বড় অংকের কিস্তির টাকা তুলে জসিমের হাতে দেন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।
টাকা নেওয়ার পর জমিস ব্যাংকে একটি একাউন্ট করে মাজেদার নামে। যাতে মাজেদা সহজে বিশ্বাস করে বিষয়টি। কিন্তু ব্যাংকের কারো সাথে কোন রকম কথা বলতে নিধেষ করে জসিম ও এনাম। একাউন্ট খোলার পর মাজেদা একাউন্টের চেকবই ও জমা রিসিট নিজের কাছে রেখে দেয় চতুর জসিম। মাজেদা বেগম বিভিন্ন কিস্তিতে জসিমের কাছে এসব টাকা দিলেও জসিম টাকা গুলো ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেই ব্যাংকের কাগজপত্র ও ব্যাংক ম্যানেজারের সীল, সাক্ষর জাল করে মাজেদার হাতে তুলে দেয় প্রায় ৩ লক্ষ টাকার জাল ভ‚য়া জমার রশিদ। সম্প্রতি তিন বছর পূর্ণ হলে বিগত ২২/১১/২০২৩ ইং তারিখে মাজেদা বেগম জমা রশিদ নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় এসব জমার সকল কাগজপত্র জাল এবং জালিয়াতীর মাধ্যমে সৃজন করা মাজেদার একাউন্টে জসিম কোন টাকাই জমা দেয়নি। ব্যাংকে গিয়ে এমন কথা শুনার পর মাজেদা বেগম জসিমের কাছে গিয়ে নিজের দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে জসিম তালবাহানা শুরু করে। জসিম বলে মাজেদার সব টাকা সে ব্যাংকে জমা দিয়েছে। সে ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে এবং তার সহযোগী এনাম বাকি টাকা জমা দিয়েছে। এখন প্রতারক এনাম নাকি মাজেদার টাকা নিয়ে বিদেশে চম্পট দিয়েছে।
এদিকে জসিমকে বারবার মাজেদার সাথে ব্যাংকে যাবার কথা বলা হলেও সে ব্যাংকে যেতে রাজি না হলে মাজেদা বেগম বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করেন। কিন্তু কোন ন্যায় বিচার না পেয়ে তিনি গত ১০/৫/২০২৩ ইং তারিখে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। প্রতারিত মাজেদা বেগম জাফলং ছৈলাখেল মোহাম্মদপুর গ্রামের আব্দুল কাদিরের স্ত্রী। অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, জসিম তাকে ধর্মের মা হিসাবে ডাকতো। তাই তার কথায় সরল বিশ্বাসে প্রথমে একটি সিএনজি বিক্রির ৩ লক্ষ টাকা, পরে গ্রামীন ব্যাংক, আশা ব্যাংকসহ বিভিন্ন সমিতি থেকে কিস্তিু হিসাবে টাকা তুলে জসিমের মাধ্যেমে ব্যাংকে অধিক লাভের আশায় ঐ টাকা গুলো তুলে দেন। প্রতারক জসিম সহজ সরল মাজেদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাফলং বাজার ও মামার দোকানে একাধিক স্বর্ণের জুয়েলারীর দোকান খোলে বসে। ব্যাংকে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে মাজেদা বেগম গত ৫/২/২০২৩ ইং তারিখে প্রতারক জসিমের কাছে তার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে জসিম তালবাহানা শুরু করে। মাজেদা বিষয়টি জসিমের পিতা আজিজ মিয়াকে অবহিত করে বিচার প্রার্থী হলে তিনি মাজেদাকে জানান, তার ছেলে জসিম তাকে বলেছে সে মাজেদার কাছ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাকি টাকা নিয়েছে তার সহযোগী এনাম সে ঐ টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। প্রকৃত পক্ষে প্রতারক এনাম জসিমের দোকানের কর্মচারী ছিলো।
তারা উভয়ে কখনো মাসিক কিস্তির কথা বলে, জসিম নিজে মাজেদার বাড়ি গিয়ে টাকা আনতেন আবার কখনো সে এনামকে পাঠিয়ে মাজেদার কাছ থেকে টাকা আনতো। এভাবে দজুন মিলে মাজেদা বেগমকে অধিক লাভের লোভ দেখিয়ে মাজেদার কাছ থেকে টাকা গুলো এনে আত্মসাৎ করে। কোন উপান্তর না দেখে মাজেদা বেগম প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বরণাপন্ন হয়েছেন বলে জানান। তিনি গত ১০/৫/২০২৩ ইং তারিখে সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
৪৪০ পড়েছেন