Sharing is caring!
আব্দুল হালিম সাগর বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এন্টি টেরিরিজম ইউনিট থেকে আসা শাহ মিজান মো.শাফিউর রহমান। তিনি ২০০১ সালে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। চাকরি জীবনে তিনি অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসেছেন। সিলেটে যোগদানের পর ডিআইজি শাফিউর রহমান বলেছিলেন, খুব বেশি পরিকল্পনা আমার নেই। তবে বিভিন্ন ইউনিটে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং পুলিশের রুটিন কাজগুলোকে ঠিকমতো পরিচালনা করা হবে আমার মূল লক্ষ্য। সিলেট রেঞ্জের মোট ৩৯টি থানা ও চার জেলার রিজার্ভ পুলিশকে জনবান্ধব করে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চাই।
পুলিশকে মানুষের দুরগোড়ায় নিয়ে আইনগত সেবা নিশ্চিত করা।‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই আপ্তবাক্যকে শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করাই আমারে টার্গেট। পুলিশ সাধারণ জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে অপরাধীদের যম হবে পুলিশ। অপরাধী যেই হোক পুলিশ তাকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করবে। যাতে অপরাধ মুক্ত করতে গিয়ে আমার অধিনস্ত কোন পুলিশ সদস্য অপরাধের সাথে না জড়ায় সে জন্য আমি যোগদান করার পর-পরই চার জেলার এসপিসহ সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি।
যদি কোন থানা এলাকার অফিসার অপরাধ করেন আর সেই অপরাধ ঐ থানার ওসি গোপন রাখেন তাকেও ছাড় দেওয়া হবেনা। এসপিদের বেলায়ও একই বক্তব্য। সিলেটের ১৯টি পৌর শহর যানজটমুক্ত রাখতে সড়ক ব্যবস্থাপনা, শহর ব্যবস্থাপনা, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ কার্যকর করে বাস-ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও পথচারীদের শৃঙ্খলা আনয়নে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে পুলিশী সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমে আসে সে লক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষায়িত পর্যটন পুলিশ রয়েছে। তারা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করেন। এর বাইরেও রেঞ্জ পুলিশ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভ্রমণকে নিরাপদ করতে কাজ করবে। শাহ মিজান শাফিউর রহমান একে একে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি ও সর্বশেষ তিনি ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে এন্টি টেরিরিজম ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে সিলেট রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদায়িত হন তিনি। শাহ মিজান শাফিউর রহমান এর আগে অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক পদে রংপুর রেঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-তেও কর্মরত ছিলেন। এরপর কর্মদক্ষতা ও সেবায় বাংলাদেশ পুলিশের বিপিএম, পিপিএম পদক লাভ করেন পুলিশের ২০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা। তিনি পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব পালনকালে ছক কষেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি তা টেকসই করার। কর্ম-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে কর্মস্থলে এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের নিকট বেশ জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। সেই লক্ষেই সিলেট রেঞ্জে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে লক্ষীপুর জেলা পুলিশের দায়িত্ব পালনকালে তিনি মাদক, সন্ত্রাস আর চাদাবাজের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন। অত্যন্ত বিনয়ী, সৎ আর সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ডিআইজি শাফিউর রহমান।জনসাধারণের মাঝে আস্থা এবং নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ইউনিয়ন এবং বাজারগুলোতে জনসাধারণের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক নিয়মিত মতবিনিময় করেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহে অংশ গ্রহণ করে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এবং ইভটিজিং এর নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করেছিলেন। তিনি মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন খেলাধূলাসহ মাদক বিরোধী কনসার্টের আয়োজনও করেন। জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে রয়েছে তাঁর শক্ত অবস্থান। তিনি শুধুমাত্র ব্যাংক চালান বাবদ মাত্র ১শ টাকা খরচ করে ঢাকা জেলা পুলিশে কনেস্টেবল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন কোমল স্বভাবের মেধাবী চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা। এর আগে ঢাকার রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) থেকে শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৬ সালের ১৬ জুন। এর পূর্বে কেবল সততা আর সাহসীকতাকে আশ্রয় করেই সন্ত্রাসের জনপদ বলে পরিচিত ফেনী ও লক্ষীপুরের গডফাদারদের রাজত্ব ভেঙে দিয়ে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে পথে এনে আলোচনায় এসেছিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। সততা, নিষ্ঠা, সাহস, পেশাদারিত্ব আর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে নিজ বাহিনীতেই শাহ মিজান শাফিউর রহমান নিজেকে পরিচিতি করেছেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে। তবে নিজের পেশাগত কাজে দেশবাসীর কাছেও সমানতালে প্রশংসিত তিনি। সুগঠিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের মর্যাদা দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বাড়িয়ে পুলিশ বাহিনীতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে। পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা ২০০১ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র্যাব, এসবি, যশোর, লক্ষীপুর, ঢাকা জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে বহু প্রশংসা আর পদক। দু’বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে রাফিউর রহমান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ এবং মেয়ে সাফিকা সাইয়ারা আইডিয়াল স্কুলে অধ্যায়নরত। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগ থেকে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। নাটোর জেলার লালপুর থানার মুরদহ গ্রামে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই একটি সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি হাফিজ-নাজনিন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন জনপ্রিয় শিক্ষক মরহুম হাফিজুর রহমান ও মা নাজনীন নূর নেছা বেগম। আলহাজ্ব মোঃ আনিসুর রহমান, মোঃ হাবিবুর রহমান, আ.ফ.ম রাশিদুর রহমান, এ.ক.এম সাইদুর রহমান এবং তিনি সহ তারা পাঁচ ভাই। তাঁর স্ত্রী রোকেয়া খাতুন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভ‚গোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, সিলেট রেঞ্জ পুলিশ হবে জনবান্ধব পুলিশ। সিলেট রেঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা চাই।
৩৮৭ পড়েছেন