• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

গোলাপগঞ্জে গরু চুরির সময়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ আটক-৩

admin
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০২৩
গোলাপগঞ্জে গরু চুরির সময়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ আটক-৩

Sharing is caring!

সিলেট এইজ: জীবনে সে যায় নি স্কুল কিংবা কলেজের বারান্ধায়। পাতি নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠে রাতারাতি বনে যায় উপজেলা ছাত্রলীগের-সহ-সভাপতি। গত বুধবার ভোর ৪টায় গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চুরির গরুসহ তাকে এবং অপর আরো দুই সহযোগীকে আটক করে।
গোলাপগঞ্জ থানার এসআই পার্থ সারথি দাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত অনুমান ৮টায় উপজেলার পৌরসভার ঘোষগাঁও মাদ্রাসার সামন থেকে তিন গরু চুরকে একটি গরু কাগজপত্র বিহীন পিকাপ গাড়ি আটক করেন তারা। আটককৃতরা চোরেরা হলো, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি একে মুন্না উরফে মুন্না আহমদ তার পিতার নাম মোবারক আলী উরফে রেনু মিয়া সে উপজেলার বাঘা রস্তুমপুর গ্রামের বর্তমান বাসিন্ধা। অপরসহযোগীরা হচ্ছেন উপজেলা লক্ষিপাশা মিরপুর গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদিও ও দক্ষিণ বাঘা ইউনিয়নের ইউসুফ আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে তারা পেশাদার গরু চুর। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে রাতে আধারে গরু চুরি করে আটককৃত পিকাপ যোগে শহরের কসাই কিংবা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। আটক একে মুন্না উরফে মুন্না আহমদের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ রয়েছে। নিজগ্রামে সিএনজি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণধোলাইর স্বীকার হয়। পরে মুসলকা দিয়ে মুক্তি পায়। মুন্নার নেতৃত্বে একটি চক্র বিভিন্ন রকম গাড়ির ব্যাটারি, সিএনজি অটোরিকশা, কৃষকের গরু-ছাগল চুরি করে আসছিলো।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশের মোবাইল ডিউটি করছিলেন থানার এসআই পার্থ সারথি দাস। গোপন সংবাদ আসে শাহপরাণ থানা এলাকা থেকে একটি গাভি গরু চুরি করে নীল কালারের পিকাপ যোগে মুন্নাসহ আরো দুজন চুর গোলাপগঞ্জ শহরের দিকে যাচ্ছে। বিষয়টি পার্থ সারথি থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে জানান। ওসি দিক নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ পৌরসভার ঘোষগাঁও এলাকায় অবস্থান নিলে রাত অনুমান ৪টায়। নীল কালারের পিকাপে তিনজন লোকসহ একটি গরু দেখতে পেয়ে পুলিশ তাদের গাড়ি থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয়। পুলিশ দেখে গাড়িটি তাদেও গতিপথ পরিবর্তন করে পৌরসভার ঘোষগাঁও গ্রামের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলে এলাকারবাসীর সহযোগীতায় ঘোষগাঁও মাদ্রাসার সামন থেকে গাড়িটি আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জানায়, গরুটি তারা শাহপরাণ এলাকা থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া প্রায় সময় তারা জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, শাহপরাণ, বাঘা এলাকা থেকে গরু চুরি করে শহরে এবং উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে থাকে। এটাই তাদের আসল পেশা।
এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে অনুমান ৫৫ হাজার টাকা মূল্যর একটি লাল রংয়ের গাভী গরু এবং ৭ লাখ টাকা দামের কাগজপত্র বিহীন একটি নীল পিকাপ উদ্ধার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
রস্তুমপুর গ্রামের একাধিকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, একে মুন্না উরফে মুন্না আহমদ (৩০) এর পিতা মোবারক আলী উরফে রেনু জৈন্তাপুর এলাকা থেকে রস্তুমপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন কয়েক বছর থেকে। সে একজন পেশাদার চুর জেনেও তাকে এলাকার কিছু নামধারী সুবিধাভোগী নেতা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সভাপতির স্থান পাইয়ে দিয়েছেন। মুন্না কোন দিন স্কুল-কলেজের বারান্ধায়ও যায়নি বলে অনেকে জানান। টাকা দিয়ে নাকি সে ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে এসআই পার্থ সারথি দাস জানান, ঘটনার রাতে গোপন খবর পেয়ে ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা অভিযান চালিয়ে একে মুন্নাসহ পেশাদার এই তিন চুরকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করি। যাহা গোলাপগঞ্জ থানার মামলা-৮ তারিখ ১০/৮/২০২৩ ইং, ধারা ৪২৩ পেনালকোড।
থানা ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েকদিন থেকে থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে গরু চুরির খবর পেয়ে থাকি। কিন্তু সেই সব চোরদের আমরা আটক করতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি এর ধারাবাহিকতায় গতকাল এই তিন পেশাদার গরু চুরকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মান্না আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন একে মুন্না ছাত্রলীগের কোন দায়িত্বে নেই। তবে পরবর্তীতে স্বীকার করে বলেন, তার নাম ভুলঃবশত কমিটিতে এসেছে। কমিটি হওয়ার পর থেকে তাকে আমরা কোন কার্যক্রমে দাওয়াত পর্যন্ত দেইনি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, সে উপজেলার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে। যখন চুরির বিষয়টি শুনেছি, তখন সাথে সাথে আমরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি অবগত করেছি। তারা যে ভাবে বলবেন, আমরা সেই ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

৬৬৬ পড়েছেন