Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার: দীর্ঘদিন পর সিলেট জিন্দাবাজারস্থ অগ্রগামীর বির্তকৃত শিক্ষক আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল ছাত্রীদের রাজপথে আন্দোলনসহ অভিযোগ দাখিল করার পর তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টসূত্র সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। বহুল আলোচিত এই শিক্ষক আবু ইউসুফ মো: সহিদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। তিনি সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক। ২০১৩ সালে তিনি এই স্কুলে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে বালিকা ইচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীদের বিভিন্ন ক্লাশে এবং বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করতেন বলে অভিযোগ ছিলো।কিন্তু তার ক্ষমতার প্রভাব এতো বেশী ছিলো সকল শিক্ষকগণ ছিলেন তার কাছে অসহায়। সহিদ এর আগে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন, সেখানে চাকরিকালে তার বিরুদ্ধে এ রকম যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে।বাধ্য হয়ে কতৃপক্ষ তাকে সেখানকার স্কুল থেকে বের করে দেন। কিন্তু কোন ভোক্তভোগী ছাত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ করার সাহস পায়নি। সেখানে তার ক্ষমতার মূলে ছিলেন তার দুই ভাই। কারন তার এক ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা আর আরেক ভাই ছিলেন বিচারক। তাই তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি সেখানে।
সিলেট আসার পর তিনি বিয়ে করেন জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্ধা সীমান্তিকের চেয়ারম্যান ও বর্তমান মামলায় পালাতক আসামী জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, ড. আহমদ আল কবির এর বোনের মেয়েকে। সেই সুবাদে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে মোমেন পরিবারের গনিষ্ট্য আত্মীয় হয়ে উঠেন। যার ফলে প্রায়ই তার সহকর্মী শিক্ষকদের নানা রকম হুমকি ধামকি দেতেন তিনি। আওয়ামী সরকার দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নিজের উপর করা অভিযোগ গুলো ধামাচাপা দিয়ে দিতেন সব সময়। নাম প্রকাশ না করে একজন প্রাক্তন ছাত্রী জানান, সহিদ স্যারের কু-কর্মের কারনে জিন্দাবাজারস্থ একটি বাসা থেকে সহিদকে বের করে দেওয়া হয়। তার চরিত্র নিয়ে নিজ স্ত্রীর অনেক সন্দেহ ছিলো, তাই বাসায় কোন যুবতি কাজের মহিলা রাখতেন না তিনি। সরকারের পট পরিবর্তন হওয়ার সাথে-সাথে তিনি নিজেকে জামায়াত সাজানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ঐ শিক্ষক আবু ইউসুফ মো.সহিদ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন। তিনি অনেক সময় একা পেয়ে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করতেন এবং বাজে ইঙ্গিত দিতেন। এমনকি ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ছোট ছাত্রী এবং শিক্ষিকারাও তার কুদৃষ্টি থেকে রেহাই পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কর্মকান্ড চালিয়ে আসলেও ভয়ে কোন ছাত্রী মুখ খুলেনি।
সর্বশেষ, গত মঙ্গলবার কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন অভিভাবক এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, নগরীর বন্দরবাজারস্থ নিউ নেশন লাইব্রেরির পাশে একটি ভবনে বসবাস করেন এই শিক্ষক। এই বাসাতে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যও চালিয়ে আসছেন তিনি। দুদিন আগেও কয়েকজন তার বাসায় পড়তে যান। এসময় সালমা (ছদ্মনাম) নামে একজনকে তার শয়নকক্ষে মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসতে বলেন। এর আগে তিনি অন্য ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দেন। ফোন আনতে যাওয়া মাত্র শিক্ষক সাহিদ রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। এভাবে অনেক ঘটনা কোচিং সেন্টারের আড়ালে চালিয়ে গেলেও তা প্রকাশ পায়নি। তবে এখন সেই মেয়েরাই প্রতিবাদ জানাচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, গণ্যমাধ্যমে যোগাযোগ করছে। পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এবার তারা সাহস করে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। আবু ইউসুফের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান ছাত্রীরা।
অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষিকা হেপি বেগম বলেন, ‘ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজ থেকে বিরত রেখেছি। এছাড়া তার বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তার দোষ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল ওয়াদুদ, অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগটি পেয়েছি, আবু ইউসুফ মো. সহিদ ছাত্র্রীদের নানা ভাবে যৌন হয়রানী করতেন। উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। আশা করি আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত শিক্ষক আবু ইউসুফ মো.সহিদ একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘আমি পারিবারিক একটি কাজে ঢাকায় আছি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ, সদ্য হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আমি তাদের পক্ষে ছিলাম এবং ফেসবুকে বেশ লেখালেখি করেছি। এই কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী কয়েকজন এই ষড়যন্ত্র করে ছাত্রীদের উস্কে দিয়েছেন।
৭৩৩ পড়েছেন