Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার: সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং দেশি-বিদেশি ফ্লাইট চালুর লক্ষ্যে চার বছর আগে কাজ শুরু হলেও কাজ চলেছে কচ্ছপ গতিতে, দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সরকারি অর্থ লুট করার উদ্দেশ্যেই ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়নসহ নানা ধরনের অপতৎপরতার কারণেই সিলেটবাসী ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক বিমানে যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আবদুল জলিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এসব অভিযোগ করেছেন। আবদুল জলিল বলেন, ‘ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। দুর্নীতি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’চার বছরে প্রকল্পের মাত্র ২২ ভাগ কাজ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বহু প্রত্যাশিত প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করে প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণের দাবি জানান।
২০২০ সালের ২৭ আগস্ট ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৭ মে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আরো এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তার পরও কাজ শেষ হয়নি। সূত্র মতে, ঐ প্রকল্পের এ পর্যন্ত ২২ শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে এটি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের মানদণ্ডে হয়নি। তৎকালীন নকশায় ত্রুটির কারণে শুরুতেই প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা এসব অনিয়মের মধ্যে প্রথমটি হলো প্রকল্প শুরুর আগেই ইকুইপমেন্ট মোবিলাইজেশন বাবদ অগ্রিম ২১২ কোটি টাকা নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি কাজ করেনি।
স্মারকলিপিতে আবদুল জব্বার দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অগ্রিম টাকা ব্যয়ের হিসাব দেয়নি। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে দুই জন পরিচালক নিয়োগ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে তারা প্রকল্প থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নকশায় ত্রুটি রেখে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কারণ ছিল প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাৎ। এর প্রমাণও মিলেছে। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ বাদ দিয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় এখন ২ হাজার ৯১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রকল্পের মূল নকশা থেকে তিনটি বোর্ডিং ব্রিজ, কার্গো বিল্ডিং অ্যান্ড পার্কিং এরিয়া, কার্গো অ্যানেক্স বিল্ডিং, ফায়ার ফাইটিং স্টেশন বাদ দেওয়া হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মইদুর রহমান মো. মওদুদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রকল্পের ড্রয়িং-ডিজাইন করা হয়। তবে কাজ শুরুর পর ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালার নতুন হালনাগাদ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানসহ আনুষঙ্গিক নকশা হালনাগাদ করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই হালনাগাদ করার জন্য নকশাকার নিয়োগ করা হয়। উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হয়নি। এখন কাজটি দ্রুত শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে। নকশা থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আবদুল জব্বার বলেন,‘প্রবাসী-অধ্যুষিত সিলেটের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে রেমিট্যান্স পাঠান। তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাই সিলেটের প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও একটি সিন্ডিকেটের কারণে উদ্যোগ সফল হয়নি বলে আবদুল জব্বার জলিল স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন। সিলেট থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হলে সিলেটের প্রবাসীরা সরাসরি সিলেট থেকে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে নানা ভোগন্তি ও অনিয়ম দূর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
৪০ পড়েছেন