Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার: নাম তার অরবিন্দু চন্দ্র দাস। পেশায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স (ব্রাদার)। ওসমানী মেডিকেলের নার্সিং এ্যসোসিয়েশনের শামীমা-সাদেকের অবৈধ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেই সুবাধে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের শাসন আমলে ক্ষমতার দাপটে তিনিও হয়ে উঠেন ওসমানী মেডিকেলের ‘অঘোষিত মুকুটহীন সম্রাট’। তার নের্তৃত্বে হাসপাতালে চলতো নার্সদের পদন্নোতি, বদলী, রোস্টার বাণিজ্য,এ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য, হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবৈধ স্ট্যান্ড বাণিজ্য, হাসপাতালের স্টোরের সরকারি ঔষধ বাণিজ্য। ওসমানীর ত্রাস হিসাবে পরিচিত ব্রাদার সাদেক দুদকের মামলায় গ্রেফতার হলে, গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন নার্স অরবিন্দু দাস। পরিস্তিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অরবিন্দু দাস এখন প্রকাশ্যে এসেছেন। অনেকটাই যেন ‘পুরাতন বোতলে নতুন মদ’ এর মতো। তবে হাসপাতালে সাদেক সিন্ডিকেট ধরে রাখতে গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন অরবিন্দু দাস। তবে নিজেকে আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি আবার নতুন করে নিজেকে বিএনপি ও জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছেন। অরবিন্দুকে আর তাকে পুনর্বানের পেছনে নেপথ্যে কাজ করছেন হাসপাতালটির সেবা তত্ত্বাবধায়ক রিনা বেগম। হাসপাতালে রিনা বেগম আরেক দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক পদে কর্মরত। হাসপাতাল থেকে কোন নার্সকে কোথায়ও ট্রেনিংয়ে পাঠাতে হলে রিনা বেগম তাদের মনোনয়ন করে থাকেন। হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো থামেনি সিনিয়র স্টাফ নার্স অরবিন্দু চন্দ্র দাসের রাজত্ব্য। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওসমানী মেডিকেলে একক রাজত্ব্য গড়ে তোলে অরবিন্দু সিন্ডিকেট। তিনি চাকুরী জীবনের শুরু থেকে সুবিধাজনক দপ্তরে ডিউটি করে আসছেন। প্রথমে রেকর্ড শাখার দায়িত্ব পালন করে পরে সেখান থেকে আরেক সুবিধার জায়গা স্টোরের দায়িত্ব পালন করেন। সকল দপ্তরে দায়িত্ব পালন করে অনৈতিকভাবে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। বর্তমানে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে স্বৈরাচারের দোসর অরবিন্দু চন্দ্র দাসের একক রাজত্ব্য। সর্বশেষ চলমান এমটি প্রশিক্ষণ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের নাম মনোনয়ন করে দেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সৌমিত্র চক্রবর্তী। সেখানে যে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে প্রথমেই বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি ভোটার সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. আছমা আক্তার খানমের নাম, আরেক স্বৈরাচারের দোসর সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. সোহেল আহমদ, সিনিয়র স্টাফ নার্স লুৎফা বেগম, সিনিয়র স্টাফ নার্স সুলতানা বেগম বাদ দেওয়া হয় সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. কিবরিয়া খোকনকে। তার স্থলে দেওয়া হয় অরবিন্দু দাসকে। রিনার সাথে গভির সম্পর্ক থাকায় অরবিন্দুকে সেই ট্রেনিংয়ে পাঠান রিনা বেগম। নার্স আসমা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ওসমানী হাসপাতালের সরকারি স্টাফ নার্স। তিনি ওসমানীর পাশাপাশি আবার চাকরি করেন বেসরকারী হাসপাতাল আলহামারাইন হাসপাতালে। তিনি ঐ হাসপাতালের নার্স সুপারভাইজার( ইনচার্জ)। বেসরকারী হাসপাতাল আলহারামাইনে চাকরি নেন হাসপাতালে মালিক মাহতাবকে ম্যানেজ করে। সে সময় আসমা নিজেকে একজন আওয়ামী লীগ সর্মথক পরিচয় দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরিটি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে নার্স হলে তিনি হাসাতালে সকাল সিফটের ডিউটি করেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম হলো তিন সিফটে ডিউটি করতে হবে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে রিনা বেগম (মেট্ট্রোন) কে ম্যানেজ করে। ওসমানী হাসপাতালে অরবিন্দুর আর আসমার ঘটনা নতুন কোন ঘটনা নয়। ওসমানী মেডিকেলে যারাই অনিয়মের প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে কৌশলে বদলি ও গায়েল করা তার নিত্যদিনের কাজ। জানা যায়, ২০১৭ সালে হাসপাতালের তৎকালীন সিনিয়র স্টাফ নার্স কুলসুমা বেগম বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়শন (বিএনএ) এর এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অরবিন্দু, রেখা বর্ণিক, পরিমল, সুমন, আমিনুল, আব্দুল খালেক, সাদেক তার একান্ত বান্দবী তৃষ্ণা দি কষ্ট্রা তৎক্ষালিন সময়ের নার্সিং সিন্ডিকেট কুলসুমাকে বিএনপির নেত্রী অপবাদ দিয়ে মারধর করে মেডিকেল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পরে শুরু হয় সিনিয়র স্টাফ রেখা বর্ণিকের রাজত্ব। এরপর রেখা বণিককে গায়েল করতে সিনিয়র স্টাফ শামীমা নাসরিনকে সভাপতি ও ইসরাইল আলী সাদেককে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ওসমানী মেডিকেল শাখার কমিটি করেন অরবিন্দু। তারপর রেখা বর্ণিকের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে আসার পর তাকে মৌলভীবাজারে বদলী করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় অরবিন্দু দাসের একক রাজত্ব। নতুন সভাপতি শামীমাকে জিম্মি করে সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক ও অরবিন্দু দাস একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। তাদের দলের সদস্য ছিলেন, পরিমল বনিক, সুমন আহমদ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, ইনজিওগ্রাম শাখায় কর্মরত গোলাম রব্বানি, সাদেকের প্রেমিকা হিসাবে পরিচিত তৃষ্ণা দি কষ্ট্রা ও সাদেকের ছোটবোন হিসাবে পরিচিত আসমা খানম।
পরে ২০২২ সালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূইয়া যোগদানের পর ঔষধ স্টোরে অনিয়ম-দূর্নীতির দায়ে অরবিন্দুকে সরিয়ে নেন মানসিক ওয়ার্ডে। এ বিষয়ে সাদেককে প্রতিবাদ করার কথা বলেন অরবিন্দু। কিন্তু সাদেক অরবিন্দু কোন কথা আমলে নেয়নি। তারপর সাদেকের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন অরবিন্দু। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কিছু দিন দুজনের মধ্যে বেশ মনোমালিন্য চলে।
এরপর দূর্নীতির মামলায় সাদেক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলে ওসমানীতে রামরাজত্ব্য শুরু করেন নার্স অরবিন্দুর দাস। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ওসমানী মেডিকেল শাখার কমিটি পূর্ণ গঠনের কাজ শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্তি না হওয়ায় অরবিন্দু তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সদ্য পলাতক মেয়র আনোয়ার চৌধুরীর দ্বারস্ত হন। বর্তমানে পলাতক আনোয়ার চৌধুরীর পরামর্শ অনুযায়ী অরবিন্দু দাস নিজে উপদেষ্টা হয়ে নার্সেস এসোসিয়েশন ওসমানী মেডিকেল নামক একটি নতুন সিন্ডিকেট কমিটি করেন। সেখানে সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন আগের কমিটির সভাপতি শামীমা নাসরিন। তিনি তাদের এই কমিটিতে বিনা প্রতিদ্ধিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এই কমিটির সভাপতি শামীমা নাসরিন হওয়ায় অরবিন্দু কোন প্রকার অবৈধ সুবিধা নিতে পারেননি। তাই কৌশলে শামীমা নাসরিনকে সভাপতির পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন তিনি। এরপর তার নেতৃত্বেই শুরু হয় শামীমা নাসরিনকে মানষিক নির্যাতন। হাসপাতালের আইসিইউতে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্বপালনে অভিজ্ঞ এই সিনিয়র নার্সকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেয়া হয়। হাসপাতালের রোস্টার খাতা তলব করেন হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রিনা বেগম। এরপর তাকে নাইট ডিউটি সহ টানা ডিউটি দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এখন শুধু তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ব্রাদার অরবিন্দু চন্দ্র দাস আলোকিত সিলেটকে বলেন, ঢাকার ট্রেনিংয়ের জন্য আমি অনেক আগেই সিভি দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। কিন্তু ট্রেনিং বিষয়ে হাসপাতাল থেকে তালিকা সিলেক্টেড হওয়ার পর কি করে অরবিন্দু দাস মনোনিত হলেন, সেই বিষয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, অনেক গোপন তত্ত্ব্য। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে সাদেক, অরবিন্দু সোহেল, সুমন, আসমাসহ তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা ট্রেনিং করে আসছেন। অথচ হাসপাতালে রয়েছেন ৮শত নার্স। ঘুরে ফিরে ট্রেনিংয়ে এই কয়েকজন গিয়ে থাকেন। এসব দূর্ণীতি নিয়ে হাসপাতালের সকল নার্স গত ১৪ সেপ্টম্বর আন্দোলনে নামেন। তাদের দাবি ছিলো, ওসমানী হাসতালের নার্সদের মধ্যে চলে আসা বিভিন্ন রকম দূর্নীতি বন্ধ করে হাসপাতালের দূর্নীতিবাজ নার্সসহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালের সরকারি টাকা আত্মসাৎ, টেন্ডারবাজি, দালাল পোষণ, সরকারি ঔষধ চুরি করে আসছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই আন্দোলনের জন্য হাসপাতালের নার্স স্টাফদের কাছ থেকে ২ শত টাকা করে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু আন্দোলন অদৃশ্য কারণে আন্দোলন বন্ধ হয়ে গেলেও নার্স ও স্টাফদের কাছ থেকে নেওয়া সেই টাকাগুলো আজ অরবিন্দু, ইমরান তফাদার, আসমা খানম ও সোহেল ফেরত দেননি। কিংবা নার্সদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা গুলো কি করা হয়েছে সেই হিসাবও দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে হাসপাতালে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযুক্তরা স্টাফ নার্সদের হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বীগুন শক্তি নিয়ে হাসপাতালে আসতেছে। ফলে নার্সদের মাঝে চাপা আতংক বিরাজ করছে।
এদিকে অরবিন্দু দাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে সংবাদ মাধ্যমে আসলে গত ২৪/১১/২০২৪ ইং তারিখে সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ কুলসুমা বেগমকে প্রধান করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। যাহার স্মারক নং-৩২১/২০২৪ ইং। কিন্তু আজবদি সেই তদন্ত রির্পোট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করা হয়নি। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনিতো অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক ভাবে না দিতে অরবিন্দু বিভিন্ন অপকৌশ চালিয়ে আসছেন। এদিকে অরবিন্দুর দাস স্টোর কিপার ইনচার্জ থাকাকালে স্টাফ নার্স (৮নং ওয়ার্ডের ইনচার্জ) শাহানাজের সাথে দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে সময় অরবিন্দু রিনাকে ম্যানেজ করে ২৫ নং ওয়ার্ডে নিজের ডিউটি নিয়ে নেয়। এ সময় দুজনের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। এনিয়ে হাসপাতালে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এদিকে র্দীঘ কয়েক বছর থেকে শাহনাজ হাসপাতাল হোস্টেলের একটি রুম একাই ভোগ করে আসছেন। তার সাথে অন্য কোন নার্স দেওয়া যাচ্ছেনা। তার আধিপত্ব্যর কারণে হাসপাতাল হোস্টেলের শাহনাজের ব্লকে তার পছন্দের বাহিরে কোন নার্সকে থাকতে দেওয়া হয়না। যে রুমে ৪জন নার্স বসবাস করার কথা, সেখানে শাহনাজ একাই একটি রুম জবর দখল করে আছেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান কুলসুমা বেগম বলেন, অরবিন্দু দাসের অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে, শিঘ্রই তদন্ত রির্পোট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রিনা বেগম বলেন, এসবের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ডিডি স্যার সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
১৫ পড়েছেন