Sharing is caring!
চা শ্রমিক ও পাত্র সম্প্রদায়ের ১৪ জন উদ্যোক্তা আছেন যারা দলদলি চা বাগান ও পাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে ৪টি বিষয়ে নিজেদের কমিউনিটির লোকজনদের বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছেন। গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেনের সহযোগিতায় একডো এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে চা বাগান ও পাত্র সম্প্রদায়ের মানুষজন নিজেদের চ্যালেঞ্জসমূহ নিজেরাই সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। একডো তাদের এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় এয়ারপোর্ট হাইস্কুলে চা শ্রমিক ও পাত্র সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আয়োজনে ‘জ্ঞানের মেলা’ নামক অনুষ্ঠানে তাদের উদ্যোগের কথা জানান। একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড.তাহমিনা ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার, এয়ারপোর্ট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমন আহমেদ চৌধুরী ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী নাজমা পারভীন।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় অর্নাস পাশ করা তুলি রানী পাত্র। পাত্র সম্প্রদায়ের এই নারী লেখাপড়া করলেও বাইরে কোনো কাজ করেন না। একদিন তিনি এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো)-এর মাধ্যমে জানতে পারেন নিজেদের সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধানে কাজ করার কথা। তারপরই নিজের শিক্ষাজীবনকে কাজে লাগাতে ও তার সম্প্রদায়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানোর উদ্যোগ নেন তিনি। গত এক বছর যাবত তার নিজ এলাকা খাদিমনগর আলাইবহরে প্রায় ৮ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠদান করাচ্ছেন তুলি।
জানা যায়, তুলি পাত্র ১৩ জন ছাত্র ছাত্রীকে টিউশন দিচ্ছেন। হৃদয় পাত্র শিশু কিশোরদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিপাশা এবং ষষ্ঠী পাত্র নিজ সম্প্রদায়ের ১৫ জনকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কল্পনা পাত্র বয়স্ক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ৭ জন বয়স্ক মহিলাকে স্বাক্ষরজ্ঞান দিয়েছেন। দীপা মুন্ডা চা শ্রমিকের কন্যাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
গীতা মুন্ডা গোলমরিচ চাষ এ উৎসাহ দিয়েছেন আশপাশের নারীদের। রত্না সাওতাল- সেলাইয়ের পাশাপাশি ১০ জন শিশু ও ৫ জন বয়স্ক মহিলাকে শিক্ষা প্রদান করেছেন।
বিজলী নায়েক ৫ জনকে শিক্ষা প্রদান করেছেন। নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষদের সাবমলম্বি করতে তারা সবাই বিনামূল্যে এসব কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের উদ্যোগের কথা শুনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.তাহমিনা ইসলাম বলেন, একডো কর্তৃক গৃহীত এ উদ্যোগটি খুব ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ সেটি সমাজের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে এ দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী এবং বাচিক শিল্পী নাজমা বেগম বলেন, আমরা শুধু নিজের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে আমার প্রতিবেশীসহ অন্যান্য সাধারণ মানুষের কথাও চিন্তা করতে হবে। তাই সবাইকে নিজেকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা খুবই দরকার।
একডো’র নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ বলেন, ব্যক্তি জীবনে আমার কি নেই সেটা চিন্তা না করে আমার কি আছে সেটি খোঁজে বের করে তা দিয়ে নিজের এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন এডকোর প্রকল্প সমন্বয়কারী তাসনীম চৌধুরী ও প্রকল্প কর্মকর্তা শার্লী ট্রানবুল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্থানীয় পাত্র এবং চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী কর্তৃক স্ব-উদ্যোগে গৃহীত নানা বিষয় নিয়ে একটি একডো’র পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আলোচনা শেষে দলদলি চা-শ্রমিক কিশোরী ফুটবল টিমের সাথে এয়ারপোর্ট উচ্চ বিদ্যালয় কিশোরী ফুটবল টিমের সাথে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। এতে দলদলি ফুটবল টিম জয়ী হয়। পরে একডো’র নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহসহ উপস্থিত অতিথিগণ বিজয়ীদের মধ্যে ট্রফি ও মেডেল প্রদান করে।
১০ পড়েছেন