Sharing is caring!
সিলেট এইজ : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, দেশ এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোন মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি, ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতেই শেষ হয়ে যায়। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নি। বিএনপি সারাদেশে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবদে সমাবেশ করছে। এই দাবী শুধু বিএনপির একার নয়, এটি জনগণের দাবী। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা দখল, লুন্ঠন, দুর্নীতিতে বিশ্বাসী। আওয়ামীলীগের ইতিহাস দেশবাসী জানে, এই ইতিহাস পরিবর্তন করা যাবে না। তাই দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এই সরকাররের পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। শনিবার বিকেলে নগরীর রেজিষ্ট্রারী মাঠে যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো সহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবীতে সিলেটে বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ঢাল, নিত্যপণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ও ১০ দফা দাবী আদায়ে আগামী ১১ই ফেব্রুয়ারী সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৮০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। মধ্যবৃত্তরা নিম্নবৃত্ত হয়ে যাচ্ছে আর নিম্নবৃত্তরা অতিদরিদ্র সীমার নিচে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতায় এসে এ পর্যন্ত ১৫ বার বিদ্যুৎ এর দাম বাড়িয়েছে। একদিকে জনগণ গরীব হচ্ছে আর অন্য দিকে তারা দুর্ণীতি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। তাই এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকির সভাপতিত্বে, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. মোঃ এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমান, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে গউস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই সরকার জনগনের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে আছে। শুরু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, আইন সকল সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ, আনসার সহ শত-শত নেতাকর্মীদের গুম করে রেখেছে। এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর তাদের কোন কাজ নাই। এই সরকারই শেষ সরকার নয়, প্রশাসনের যারা জনগনের সাথে শত্রুতার আচরণ করছে তাদের কিন্তু দেশেই থাকতে হবে। নির্দেশদাতারা পালিয়ে যাবে, আপনারা পালাতে পারবেন না। দেশের জনগনকে সাথে নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে ১০ দফা দাবী বাস্তবায়ন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ক্ষমতা দখলের হিস্যা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে এখন শৃঙ্খলা নেই। দেশ আজ অকার্যকর রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯১ সালে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল। তখন দেশের শক্তিশালী কুটনৈতিক তৎপরতার কারনে তারা ফেরত গিয়েছিল। সরকার তাদের প্রভুদের খুশি করার জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারছে না। বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ কর্মীরা আজ গায়েবী মামলার আসামী। তারা প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। দেশে এখন কোন সরকার নেই, আছে ডাকাত দল, লুটেরা দল। তারা এক মাসে দুই বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তাই এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর বিকল্প নেই। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, সারাদেশে যেখানেই বিএনপি মিটিং করে, যেখানে তারাও একই দিনে মিটিং করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিন মানুষ ঘুম থেকে দেখে আগের রাতে ভোট দেয়া শেষ। মৃত মানুষ কবর থেকে উঠে এসে নাকি সেই নির্বাচনে ভেট দিয়েছে। বাংলাদেশের সেই নির্বাচন দেখার পর জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন ‘আমরা জানতে পেরেছি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালেট ভর্তি হয়েগেছে, পুলিশ সেই কাজ করেছে। পৃথিবীর কোথাও এমন কাজ হয়নি’। মানুষ কত নির্লজ্জ বেহায়া হলে বলতে পারে তাদের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। তারা আবার তাহাজ্জুদও নাকি পড়ে। মসজিদে মুসল্লিদের সাথে চুরও যায়, মুসল্লীরা নামাজ পড়েন, আর চুর চুরি করে। আবারো ভোট চুরির নির্বাচনের নীল নকশা করা হচ্ছে। সূর্য পশ্চিম দিকে উঠাও যদি সম্ভব হয়, তবুও শেখ হাসিনার অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই সরকার যদি আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে দেশের মানুষ আর বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই জোর করে ক্ষমতা আকড়ে থাকা এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যানে বিদায় করতে হবে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ট। বিএনপি যখন সমাবেশ করে আওয়ামীলীগ তখন পাহারা দিতে ব্যস্ত থাকে। তাই এই পাহারা পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্টা করতে হবে। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির ১০ দফা আন্দোলন কর্মসূচিতে সিলেটবাসী অকুণ্ঠ সমথর্ন দিয়েছে। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিস্ট করকারের পতন হবে। ইনশাআল্লাহ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্টা করা হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সংসদ সদস্য নাজির হোসেন, সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক হুমায়ুন কবির শাহীন, জিয়াউল আরিফিন জিল্লুর, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, এডভোকেট হাবিবুর রহমান, বিএনপি নেতা এডভোকেট আবেদ রাজা, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রশীদ (চাকসু) প্রমূখ। সভায় সিলেট জেলার সকল উপজেলা-পৌরসভা এবং সিলেট মহানগরের সকল ওয়ার্ড থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা যোগদান করেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
৪৬৫ পড়েছেন