Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেটের রাস্তায়-রাস্তায় এখন নতুন আতংকের নাম হিজরা আতংক। একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগীতায় দিনে দুপুরে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে চলে চাঁদাবাজিসহ অনৈতিক কর্মকান্ড। কমিশনের লোভে চক্রের সদস্যরা নগরীর বাসা-বাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে সহ সামাজিক অনুষ্ঠানের খবর মোবাইলে জানিয়ে দিচ্ছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছে বকশিসের অজুহাতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সিএনজি অটোরিকশা চালক, কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন দোকানদার সহ নানা মাধ্যম থেকে মুঠোফোনে সামাজিক অনুষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে সেখানে উপস্থিত হয় হিজড়ার দল। প্রতিমাসে নগরীর সব ধরণের দোকানে দল বেঁধে হানা দিয়ে মাসিক চাঁদা তুলা অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন গ্রুপের তৃত্বীয় লিঙ্গের সদস্যরা। চাঁদা না পেলে আগত ক্রেতা ও দোকানির সামনে একসাথে সবাই হাতে তালি দিয়ে নিজেদের পড়নের কাপড় খোলার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। ছাড় পাচ্ছেনা রেলে যাতায়াতকারীরা ও ফুটপাতের দোকানদাররাও। পঞ্চাশ কেজি চালের প্লাস্টিকের বস্তা ধরে দুজন সামনে হাটে আর অন্যান্য সদস্যরা কিছু না বলে ফল, সবজি, পেঁয়াজ সহ যা দেখছে দু-চার-ছয়টা করে বস্তায় ভরে চলে যাচ্ছে। চক্ষুলজ্জা ও মানসম্মানের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ বা তাদের প্রতিহত না করায় নির্ভয়ে ইচ্ছে মত লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিয়ের গাড়ির অপেক্ষায় ওঁত পেতে হিজড়াদের বসে থাকতে দেখা যায়। গাড়ি বহর দেখামাত্র জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা হুমড়ি খেয়ে সামনে পরে গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। এতে করে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও শহরের বাহিরে সিলেটের পর্যটন স্পট বিছানাকান্দি, সাদাপাথর জাফলং এ বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে সেখানেও হিজড়ারা সক্রিয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্প্রতি সাদাপাথর গাড়ি পার্কিং স্থলে এক হিজড়া সদস্য বলে, প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা সিলেটের সুন্দরী হিজড়াকে দিয়ে তারা বকশিস কালেকশন করছেন। চাঁদাকে তারা বকশিস বলে প্রচার করে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এদের অধিকাংশ ভ‚য়া ও রূপান্তরিত হিজড়া। প্রতারণা ও চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে হিজরার ছদ্মবেশ ধারণ করে অনেকে লাখপতি কেউবা কোটিপতি বনে গেছে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকে রূপান্তরিত হয়ে কেউ আবার ছদ্মবেশ ধারণ করে হিজড়া হিসেবে চাঁদাবাজি করছে। শহরে হিজড়াদের ১৫ থেকে ২৫ টি গ্রæপ রয়েছে। প্রত্যেক গ্রæপের নির্দিষ্ট এলাকায় সীমানা ভাগ করা আছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব হিজড়াদের নেতৃত্ব দিচ্ছে রানা হিজড়া, সুন্দরী হিজড়া, রাণী মুখার্জী হিজড়া ও কালি হিজড়া, সাহিদা সহ নামে বেনামে তৃত্বীয় লিঙ্গের সদস্যরা। জানা যায়, ২০১৮ সালে কদমতলীর বহুতল ভবন কুইন্স টাওয়ারে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছে সুন্দরী হিজড়া। সেখান থেকে সুদের ব্যবসা ও হিজড়াদের প্রায় সব কয়টি গ্রæপ পরিচালনা করছে সে। হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্বে সুন্দরী থাকলেও কোনো হিজড়ার কল্যাণ হয়েছে বলে জানা যায়নি। তৃত্বীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠন বিভিন্ন সময় উপঢৌকন, প্রণোদনা, আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়। বিগত দিনে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগীতায় সুন্দরী হিজড়ার মাধ্যমে আটটি আধুনিক চটপটি বিক্রির ভ্যান গাড়ী দেয়া হয়। কিছুদিন পর সে গাড়ির হদিস পাওয়া যায় নি। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সুবহানীঘাট থেকে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য তুষার আহমদের লাশ উদ্ধার হয়। তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমদ রাফি জানায়, তার ছোটভাই নারী ছদ্মবেশে হিজরাদের সাথে মিশে চলাফেরা করতো। সে প্রকৃত হিজরা নয়। টাকার নেশায় তুষারের মত যুবকরা হিজরা সেজে জড়িয়ে পরছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
অভিযোগ আছে, দক্ষিণ সুরমার এক অংশের নেতৃত্বদানকারী রানা হিজরা প্রকৃতপক্ষে একজন পুরুষ। তার ঘর-সংসার, বউ-বাচ্চা রয়েছে। হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি সুন্দরী হিজরা উরফে রহিম বলেন, ভ‚য়া হিজরাদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার রয়েছেন। এদের প্রতিহত করতে সাংবাদিক সহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এদিকে সুন্দরী হিজরার নাকি রয়েছে সন্তান সহ সংসার। প্রায় কোটি টাকায় ওসমানী নগরের দয়ামিরে করেছেন বিশাল দালান বাড়ি। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার)-পিপিএম বলেন, জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমন্বয়ে এ ব্যাপার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যারা হিজরা সেজে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪২২ পড়েছেন