Sharing is caring!
সিলেট এইজ : সিলেটের রাজনীতিতে একসময়ের আলোচিত নেতা বাবরুল হোসেন (বাবুল) মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসজীবন যাপন করা বাবরুল নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে সিলেটের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন সিলেট পৌরসভার দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক একসময় সিলেট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। পরে অবশ্য জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে দলটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। এখন তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার রাতে একাধিকবার বাবরুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁর নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অনেকেই তাঁকে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। যদিও বয়সের কথা বিবেচনায় নিয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে প্রার্থিতার বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাবরুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, বিএনপির নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে দলটির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেবেন না, এমন গুঞ্জন আছে। আরিফুল নির্বাচনে না এলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সহজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ জন্য আনোয়ারুজ্জামানের বিরোধী শিবির বাবরুলকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটের একজন রাজনীতিবিদ বলেন, দেশে থাকাকালে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি বাবরুল সিলেটের সামাজিক আন্দোলনেও অত্যন্ত পরিচিত মুখ ছিলেন। ‘জাগো সিলেট’ নামের একটি সংগঠনের জন্ম দিয়ে একসময় তিনি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ষাট ও সত্তরের দশকের সাবেক ছাত্রনেতা তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও তৈরি করতে পারবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তৎকালীন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবরুল হোসেন। পরে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি চেয়ারম্যান হন। বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী বাংলাদেশ সফরে এলে তাঁকে ১৯৭৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটে সংবর্ধনা দেন বাবরুল হোসেন। একাধিক রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন এখন ২৭টি ওয়ার্ড থেকে ৪২টি ওয়ার্ডে বর্ধিত। বাবরুল সিলেট পৌরসভার দুবারের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সদর উপজেলারও সাবেক চেয়ারম্যান। তাই সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়লেও সদর উপজেলার সাবেক জনপ্রতিনিধি হওয়ায় বর্ধিত এলাকা এবং সেখানকার বাসিন্দারাও তাঁর পূর্বপরিচিত। প্রবাসে থাকলেও তিনি বিচ্ছিন্ন নন। প্রায়ই দেশে আসেন এবং নগরের অনেকের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক আছে। নির্বাচনী মাঠে এ সুবিধা তিনি ভালোভাবেই কাজে লাগাবেন। মূলত কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে বাবরুল হোসেনকে নির্বাচনী মাঠে নামাতে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা উৎসাহ দেখিয়েছে। প্রথমত, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হলে তাঁর সমর্থকদের ভোট বাবরুলের বক্সে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় দলটির ভেতরকার দ্বন্দ্ব–বিভেদের সুবিধা পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, সিলেট নগর ও শহরতলিতে ব্যক্তি বাবরুল হোসেনের ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা আছে।
৪২১ পড়েছেন