• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ধুঁকে ধুঁকে চলছে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২২, ২০২২
ধুঁকে ধুঁকে চলছে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা

Sharing is caring!

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : ডাক্তার-নার্সসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহৃত হচ্ছে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। আর গত দেড় দশক ধরে বন্ধ রয়েছে অপরেশন থিয়েটার। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের যেতে হতে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল কিংবা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ডাক্তার নার্স সংকট নিরসনসহ বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার দ্রæত চালুর দাবী উপজেলাবাসির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের জুন মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় নতুন ভবন। এরপর ২০১৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের। ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হলেও মূলত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি। এছাড়াও কনসালট্যান্ট (সার্জারি), কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অপারেশন থিয়েটারটি চালু করা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে আবার জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া) পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। নেই মেডিকেলটেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদেও জনবল। যে কারণে হাসপাতালটিতে হচ্ছে না পরীক্ষা নিরীক্ষা। ফলে বাধ্য হয়েই বাহিরের বিভিন্ন ডাযাগনস্টিক অথবা প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। আর বাহিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে দালালদের খপ্পরেও পড়ছেন অনেক রোগী।
এদিকে, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের ৩টি পদের মধ্যে একটি পদ শূন্য, মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক-হোমিওপ্যাথিক) ১টি পদের একটিই শূন্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫টি পদের একটি পদ শূন্য, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ২টি পদের দুটি শূন্য, ফার্মাসিস্টের ২টি পদই শূন্য, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৩টি পদের ৩টি শূন্য, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ১১টি পদের ৪টি পদ শূন্য ও স্বাস্থ্য সহকারী ৫৫ জনের মধ্যে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে পরীক্ষা করাতে আসা মনিরা খানম নামে এক নারী জানান, এখানে একটি পরীক্ষা করাতে এসেছিলাম। কিন্তু কাগজ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ারপর নার্সরা বলল এ পরীক্ষা এখানে হয় না বাহির থেকে করাতে হবে। তিনি বলেন, যে পরীক্ষা আমি হাসপাতালে দেড় থেকে দুইশত টাকায় করাতে পারতাম সেই একই পরীক্ষা আমাকে বাহির থেকে ৮শত টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে। ভোক্তভূগী ফরিদ আহমেদ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটিতে কোন চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। সড়ক দূর্ঘটনা কিংবা মারামারি করে সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে আসলেই তারা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল অথবা সিলেট রেফার্ড করে দেয়। রুহান আহমেদ নামে এক যুবক জানান, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কোন চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে তারা বলে ডাক্তার নেই নার্স নেই। ফলে বাধ্য হয়েই রোগীদের অন্যত্র যেতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটিতে অনেকগুলো পদই শূণ্য রয়েছে। যে কারণে আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে চিটি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল পেলে আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিতে পারব। হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মুখলেছুর রহমান উজ্জল বলেন, নতুন চিকিৎসক নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত এ সংকট কমবে না। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

৪১৪ পড়েছেন