Sharing is caring!
ভূমি খেকো রতন মনি’ মোহন্ত জিরো থেকে কোটিপতি !
পর গৃহে আশ্রিত থেকে উত্থান শুরু হয় কথিত জনৈক ভূমি খেকো জালিয়াতি চক্রের গডফাদার রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙ মোহন্ত। যার নুন খেয়ে বড়ও হয়েছিল ব্যাঙি মোহন্ত তাদের সঙ্গে বেইমানি করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছিল প্রায় কোটি টাকা।
সম্প্রতি এসে ওই কথিত ব্যাঙি মোহন্তের হুকুমে এক সংবাদকর্মীকে অপহরণ করিয়ে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে নাথপাড়া বাসীর কাল ভৈরব মন্দিরেও থালা ঝুলিয়ে আধিপাত্য বিস্তার করছে। এদিকে ওই সংবাদকর্মীকে ফাঁসানোর ফন্দি আটছে। কৌশলে প্রশাসনের চোখে নিজেকে বালাই রাখতে বাড়াটিয়া লোকবল সংগ্রহ করে তাদের টিপসই দস্তগত হাতিয়ে নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে একখানা দরখাস্ত দাখিল করেছে বলে একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্রটি আরও নিশ্চিত করেছে সংবাদকর্মীর দেওয়া অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা হলেন এসআই বিদ্যুৎ। এর আগে তিনি বিমানবন্দর থানায় কর্মরত থাকাবস্থায় রতন মনি মোহন্তের হাতের পুতুল হয়ে তাকে শেল্টার দিয়ে গেছেন।
এবিষয়ে জানতে রতন মনি মোহন্তের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এগুলো সম্পন্ন ভূয়া ও মিথ্যা মামলা। আপনে একবার বাসায় এসে দেখা করবেন বলেই মুঠোফোন সংযোগ কেটে দেন। অন্যদিকে মহামায়ার ছেলে রতন প্রতিবেদক’কে মুঠোফোনে বলেন, আমাদের পুরো পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে ওই প্রতারক। বর্তমানে আমরা আত্মসাৎকৃত মামলার রায় পেয়েছি। তাকে আদালত অর্থদন্ড ও সাজা দিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন বর্তমানেও আমরা চরম নিরাপত্তাহীণতায় ভূগছি।
অনূসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই ভয়াবহ তথ্য। একটি পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের পথে বসিয়ে হাতিয়ে নেয় ৯২,৪৭,৭৮৬/(বিরানব্বই লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার সাতশত’ ছিয়াশি টাকা)। পরে আর তাকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। শুরু হয় তার জীবনের উত্থান। ফলোআপ।
সরেজমিন তদন্তে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার শাহপরান (রঃ) এস.এম.পি থানার ইসলামপুর (মেজরটিলা) উত্তরা আ/এ, নাথপাড়া, বাসা নং-২৩০ রণজিৎ কুমারের স্ত্রী মহামায়া রানী নাথ বিগত ১৫ জুন ২০১৪ইং- সনে তার শ্বশুর ও স্বামীর সহায় সম্পত্তি, টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে এর প্রতিকার দাবি করে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবরে একখানা লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন রসময় মোহন্তের ছেলে রতন মনি মোহন্ত তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে ধর্মের মা-বাবা ডেকে প্রথমে আশ্রয় নেয় তাদের পরিবারে। সেখানে থেকে সে লেখাপড়া চালিয়ে এস.এস.সি পাশ করে। একপর্যায় সেই পরিবারের সকলের নিকঠ সে বিশ্বস্থ হয়ে উঠে। ১৯৮৮-৮৯ সনে মহামায়া’র পৈত্রিক পুরাণ বাড়িতে বেশ কয়েকবার সে ডাকাতি সংঘটিত করায়। কিন্তু সেই পরিবার এর প্রতিকার দাবি করতে গেলে কৌশলে ব্যাঙি মোহন্ত তাদেরকে ডাকাতরা উল্টো হামলা-মামলা ও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আটকে দিত। সে ভুক্তভোগী পরিবারকে কুপরামর্শ দিতে থাকে এই বসত বাড়ি বিক্রয় না করলে তারা ডাকাতদের হাত থেকে রেহাই পাবেননা। সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে যায় সেই পরিবার। তার কথা মত বিক্রয় করে দেন সকল সহায় সম্পত্তি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদেরকে অন্যত্র জায়গা কিনে দেওয়ার কথা বলে নিজ হেফাজতে নিয়ে নেয় জমি বিক্রয়ের এসকল টাকা কড়ি। দলইপাড়া, আলমদিনা ও নিপবন নামীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মহামায়ার শ্বশুর ও স্বামীর নামে জায়গা খরিদ করেছে মর্মে লোক দেখানো ভাব প্রকাশ করতও। কোন কাগজাদি বা দলিল চাইতে গেলে বলতো নামজারী ও জরিপ শেষ করার পর সমজিয়ে দিবে। সেই টাকা পয়সা ছাড়াও তৎক্ষণে রণজিৎ কুমারের ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে চেক নিয়ে সে নিজে দস্তগত দিয়ে আরও ১১,৩৭,৭৬৮/(এগারো লক্ষ সাতশত’ আটষট্টি) টাকা তুলে নেয়। একই কায়দায় আরও কিছু জায়গা বিক্রয় করে মহামায়ার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১৫,০০,০০০/(পনের লক্ষ) টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে রণজিৎ কুমারের ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলণ করে পকেট ভারি করে ওই প্রতারক ব্যাঙি মোহন্ত। সবশেষে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে তার শ্বশুর বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলাধীন মানিকপুর/মির্জাপুর এলাকায় খরিদা ২.৩৮ একর জমির কাগজ সমজিয়ে দেয়। এতেও দেখা যায় ওই ভূমি মনোরঞ্জন নাথ নামের একজন জনৈক ব্যক্তি বর্গা চাষ করে আসছেন। ফলানো ধান চাইতে গেলেও বাধা-বিপত্তির সম্মুখিন। গত ৩০ মে ২০১৪ ইং- সনে ধান আনার সময় হামলা করে বসে ব্যাঙি মোহন্ত। পরে ভুক্তিভোগী পরিবার এনিয়ে শাহপরাণ (রঃ) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তৎসময় পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে সিলেট আদালতে মামলা দাখিল করলে থানা পুলিশ বিষয়টি নজরে নিয়ে এজাহার হিসেবে গণ্য করে। শুরু হয় এবার সেই পরিবারের উপর উল্টো ষড়যন্ত্রমুলক হামলা-মামলা ও নির্যাতন নিপীড়ন। এক ঘরে করে রাখে কয়েক বছর। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ৪-৫টি মামলার গ্লানি কাঁধে পড়ে মহামায়ার পরিবারের উপর। দীর্ঘদিন আদালতে দৌড়ঝাঁপ দেওয়ার পর সবগুলো মামলার রায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আসলেও এখন তারা নিঃস্ব। যদিও ভুক্তভোগীদের মামলায় তাকে অর্থদন্ডসহ সাজা প্রদান করা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপরের পরিবারের মতো আরেকটি পরিবারকে সে একই কায়দায় নিঃস্ব করার পায়তারা চালিয়েছে। বিমানবন্দর থানার ডলিয়া গ্রামের বাবলী রানী নাথ এর প্রতিকার চেয়ে ওই থানায় রতন মনি মোহন্তকে আসামি দিয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে গং- আরও ৪০/৫০ জনকে আসামি করা হয়। যার মামলা নং-৩/১১৯।
সেই এফ আই আর কৃত মামলায় বাদিনী উল্লেখ করেন পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য বিবাদীগণ জাল-জালিয়াতি কাগজ সৃষ্টি করে এবং ভূমি জবর দখল নিতে সরেজমিনে হামলে পড়েন।
অপরদিকে আরও জানা যায়, অবমূল্যায়ন মামলাভূক্ত কুড়িটি (২০) দলিল সমুহের আত্মসাৎকৃত সরকারী রাজস্বের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮৯,৬৪,০৪৮/(উননব্বই লক্ষ আটচল্লিশ টাকা একষট্টি পয়সা)। এসকল অবমূল্যায়ন মামলা বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র দুটি মামলায় তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও বিমান বন্দর থানার নন এফ আই আর নং-১২ তাং-১৯/১/২০২৩ ইং-ধারা ১০৭/১১৭ নন জিআর নং-৩/২৩ রতন মনি দ্বয়ের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দেওয়া হলে আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানী শেষে তাদের ৩০০০/ (তিন হাজার) টাকা মুচলেখা সম্পাদনের আদেশ প্রদান করেন।
৫৬ পড়েছেন