Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিনিধি: ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার কর্মরত এসআই জুনেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সাবেক ছাত্রলীগের ক্যাডার জুনেদ আওয়ামী লীগের শাসন আমলে যেরকম ক্ষমতার ধাপট দেখিয়েছেন। কোন কোন থানার ওসিরা ও সে রকম ক্ষমতা দেখাতে পারেননি। কারণ তিনি ছিলেন সিলেট আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বৈদেশিক ও প্রবাসীকল্যান মন্ত্রীর পিএস হিসাবে পরিচিত প্রফেসার ফজলুর রহমানের নিজস্ব লোক। তার দায়িত্বকালীন সময়েই জাফলং পর্যটন এলাকায় সবচেয়ে বেশী বোমা মেশিন ও এক্সেভেটার চলানো হতো। এসআই জুনেদ আহমদ তার সহযোগী এএসআই রাজিব সারাদিন জাফলং বাজারের শফিক মার্কেটে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন। রাত ৮টা হলেই বস্তা নিয়ে চলে যেতেন পাথর কোয়ারী এলাকায় প্রতিটি গর্ত থেতে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করতেন জুনেদ ও এএসআই রাজিব। খোঁজ নিয়ে যানা যায়, জুনেদের সহযোগী এএসআই রাজিব রংপুর রেঞ্জে কর্মরত আছেন।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, এই সময় জাফলং এলাকায় প্রায় তিনি শতাধিক গর্তে পাথর উত্তোলন করা হতো। জুনেদের নিজের ৫০% শেয়ার ছিলো ২৫টি কোয়ারী, আর ওসি আব্দুল জলিলের শেয়ার ছিলো ১০টি কোয়ারীতে। বাকিগুলোতে শুধু জুনেদ ছিলেন ২৫% অংশিদার। তবে যেসব জমি থেকে জুনেদ পাথর উত্তোলন করে নিয়েছে সেসব বেশীর ভাগ জমি ছিলো স্থানীয় বিএনপি, যুবদলসহ ও সাধারণ মানুষের। ওসি জলিল ও দারোগা জুনেদের হাত ধরে সে সময় উত্তানহয় পাথর রাজ্যর স্বঘোষিত গডফাদার মুক্তযোদ্ধা ইনছান আলীর ছেলে আলীম উদ্দিনের। এ সময় পাথর কোয়ারী এলাকায় কত মানুষকে এসআই জুনেদ ও আলীম উদ্দিন বাহিনীর নির্যাতন নিপীড়ন করেছেন তার হিসাব শুনলে স্থানীয়দের গা শিউরে উঠে। কত মানুষকে বাড়ী ঘর ছাড়া করেছে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা, এখনোও জাফলং এলাকার মানুষজন ভুলতে পরেনি। এসআই জুনেদের বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌরসভার মোহাম্মদপুর গ্রামে। ছিলেন সাবেক এমপি রঞ্জিত সরকার গ্রুপের ক্যাডার। বিশেষ সুপারিশে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে চাকরি পেয়ে যান। ২০১৭ সালে গোয়াইনঘাট থানায় এসআই হিসাবে যোগদেন। সে সময় জাফলং পাথর কোয়ারীতে ঘরে ঘুমন্ত ৭ জন শ্রমিককে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ঘটনায় নিজের মতো করে গোয়াইনঘাট থানার মামলা নং ৩৩/২০১৭ইং (তাং ২০/৫/২০২৭ ইং) দায়ের হলে প্রকৃত আসামীদের আড়াল করে এসআই জুনেদ নিরিহ মানুষকে আসামী করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এ সময় বিএনপি, যুবদল কারো জমি শুনলেই এসআই জুনেদসহ লাইনম্যানরা জবর দখল করে নিতো। লাইনম্যানদের সাথে এসআই জুনেদ সরাসরি জড়িত থাকায় বিনা পুঁজিতে ওসি আব্দুল জলিল ও নিজ নামে ২৫% শেয়ারের মালিক হয়ে যেতেন। প্রতিটি বোমা মেশিনের গর্তে তিনি ছিলেন বিনা পুঁজির অংশিদার। নিজ জমিতে কেউ পাথর উত্তোলন করলে এসআই জুনেদ দলবল নিয়ে ছুটে গিয়ে বাঁধা দিতেন। নগদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বসতেন। না হলে কাজ বন্ধ করে আসতেন। পরে লাইনম্যানদের মধ্যস্থতায় তাকে ২৫% শেয়ার দিয়ে দিতে বাধ্য করা হতো। এ সময় সাবেক যুবদল নেতা সুমন, মোঃ রাজু আহমেদ, আক্তার হোসেন, আব্দুল আজিজ, আলমাস মিয়া, আব্দুস সালাম ,খোকন আহমেদ, কুটিমের কাছ থেকে ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন শ্রমিক পুড়ানোর মামলার ঘটনার মামলা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির যুব-বিষয়ক সম্পাদক নুরুল সিকদার অভিযোগ করেন, তিনিসহ থানার জনৈক দারোগা একখন্ড জমি খরিদ করেছিলেন, কিন্তু তিনি বিএনপি রাজনীতি করার অপরাধে এসআই জুনেদ আহমদ সেই জমি থেকে পাথর উত্তোলন করিয়ে নেয় লাইনম্যানদের নিয়ে। থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও ওসি জলিল তা গ্রহণ করেননি। আর স্থানীয়দের মাঝে ভিতি সঞ্চার করতে জুনেদ নিজের পুলিশিং ক্ষমতার পাশাপাশি ৩০ থেকে ৪০টি ছেলে প্রতিদিন ভাড়া করে রাখছেন বর্তমান ট্রাক শ্রমিক সমিতির সভাপতি সবেদের নেতৃত্বে।
ব্রাম্মনবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর থানার বাসিন্ধা নজরুল ইসলাম, ২০১৬ সালে জাফলং এসে দেড় লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে গৃহনির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। জীবিকা নির্বাহ করতে তিনি রিক্সা চালিয়ে। কিন্তু সেই জমিতে পাথর থাকায় এসআই জুনেদ আহমদ তাকে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমিটি ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় লাইনম্যানদের কথায় তাকে ২০১৮ সালে গাঁজা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন এসআই জুনেদ। পরে নজরুল ইসলাম জামিনে বেরিয়ে আসলেও আর জাফলংয়ে থাকতে পারেননি। সে সময় রাতের আধাঁরে তাকে এলাকা ছাড়া করেন এসআই জুনেদ। পরে সেই জমির উপর থাকা বসত ঘর ভেঙ্গে পাথর উত্তোলন করেন এসআই জুনেদসহ লাইনম্যানরা।
সেই সময়কার একাধিক পুলিশ সদস্য অভিযোগ করেন, এসআই জুনেদের অত্যাচারে থানা কম্পাউন্টের ভিতরে আত্মহত্যা করতে বাধ্যহন এসআই দিলিপ বড়ূয়া। কারণ জুনেদ এসআই দিলিপকে মানষিক ভাবে নানা রকম অত্যাচার করে আসছিলেন। কিন্তু ওসির খাসলোক হওয়ায় জুনেদ সব দায় থেকে পার পেয়ে যান। এই সময়ের অনেক নির্যাতিত ভূক্তভোগী বক্তব্য দিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সে সময় এসপি অফিসে একাধিক অভিযোগ হয়েছিলো জুনেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাবেক মন্ত্রী ইমরানের এপিএস হিসাবে পরিচিত সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল রহমান হয়ে উঠেন এসআই জুনেদের রক্ষা কবজ। সকল অপরাধ করে জুনেদ অনাসেই পার পেয়ে গেছেন। এ সময় লাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলীম উদ্দিন বাহিনী ও মন্ত্রীর লোক হিসাবে পরিচিত জামাই সুমন, আলাউদ্দিন, ফয়জুল বাহিনী মুখামোখি অবস্থান করে এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব সৃষ্টি করেন। একাধিক সংঘর্ষের ঘটনার ঘটনা ঘটে।
এদিকে আলীম উদ্দিন, এসআই জুনেদ ও ওসি আব্দুল জলিলের আস্থাভাজন হয়ায় লাইনম্যানরা বাধ্য হয়ে আলীমের সাথে আপোষ করে জাফলং কোয়ারিতে লুটপাট চালায়। এ সময় আলীম উদ্দিন বাহিনী বিভিন্নজনের জমি জবরদখল করতে গিয়ে হামলা, মামলার স্টিমরোলার চালায় সাধারণ মানুষের উপরে। হামলার শিকার ব্যক্তিরা সে সময় হাসপাতালে চিকিৎসার নিতে আসতেও পারেনি। কারণ সেখানে উপস্তিত ছিলেন এসআই জুনেদ ও তার সহযোগী এএসআই রাজিব। এসময় তাদের কাজের কোন প্রতিবাদ করলেই ইয়াবা, গাঁজা দিয়ে চালান দিয়ে তার জমি জবর দখল করে রাতারাতি পাথর উত্তোলন করে নিতেন জুনেদ বাহিনী। এভাবে গড়ে উঠে এসআই জুনেদ ও রাজিবের সম্পদের পাহাড়।
সর্বশেষ তথ্য মতে, একাধিক ভুক্তভোগীসহ সাংবাদিক আব্দুল হালিম সাগর, সাবেক যুবদল নেতা সুমন আহমদ, নুরুল সিদকারসহ অনেকে এসআই জুনেদ ও এএসআই রাজিব ও সাবেক ওসির জলিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
২৪ পড়েছেন