Sharing is caring!
সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা আমদানী। তখন সীমান্ত পেরিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের একটি থানা এলাকায় শুরু হয়েছে চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড়া নিয়ে বাণিজ্য আর চাঁদাবাজী। প্রশাসনের মদদে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল পরিমান ভারতীয় চোরাই চিনি ঢুকছে অবাধে এসএমপি এলাকায়। চিনি চোরাচালানে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ে দিয়ে টাকা কামানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলছে গাড়ি ছাড়ের এই মহোৎসব।
অভিযোগ রয়েছে, শাহপরান (রহ.) মাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আইসি মিজানুর রহমানের যোগসাজশে এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে এসএমপি এলাকা পার করে দেওয়ার কাজটি ওসি মনির হোসেনের অধীনস্থদের মধ্যে তার গাড়ি চালক শফিককে দিয়েই তিনি বহুদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্প্রতি শাহপরান (রহ.) মাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি হিসেবে যোগদান করেন এসআই সানাউল ইসলাম। তিনি যোগদান করেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) নির্দেশে আটক করতে থাকেন চোরাইপন্যবাহি গাড়ি। অদৃশ্য কোন কারণে আইসি হিসেবে সানাউল ইসলাম যোগদানের পূর্বে ওসি মনির হোসেনের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব হয়নি চিনির গাড়ি আটক কিংবা মামলা দেওয়া। উল্টো আইসি সানাউল ইসলাম এসব চোরাই চিনির ট্রাক আটক করতেন সে গাড়িতে থাকা মালের মূল মালিকের নাম মামলায় আসামি করতে চাইলে ওসি মনির হোসেন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যেতেন শেষ মেশ নিরোপায় হয়ে আইসি সানাউল ইসলাম ওসির কথামতোই এজাহার প্রস্তুত করতে বাধ্য হতেন। এক কথায় তামাবিল মহাসড়কের চিনি চোরাকারবারিদের গলার কাঁটা আইসি সানাউল ইসলাম। নাম প্রকাশে থানা পুলিশের একাধিক বিশ^স্থ্য নিশ্চিত করে, শাহপরাণ থানার ওসি মনির হোসেন চিনির গাড়ি না ধরার জন্য বিভিন্ন ভাবে আইসি সানাউল ইসলামকে বদলির ভয়ভীতি সহ নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। সম্প্রতি আইসি সানাউল ইসলাম সহ পুলিশের একটি টিম চোরাই চিনি আসছে মর্মে খবর পেয়ে সুরমাগেইট বাইপাস এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার সময় ওসি মনির হোসেনের পরামর্শক্রমে আইসি সানাউল ইসলাম ভেবে ফাঁড়িতে যোগদানকৃত এক নতুন কনেস্টবলকে প্রাইভেট কারযোগে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায় চোরাকারবারি দলের কয়েকজন। এমনকি তাকে আইসি সানাউল ইসলাম ভেবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চড়-থাপ্পড়ও মারে। পরবর্তীতে সে পুলিশের কনেস্টবল বুঝতে পারায় প্রাণে রক্ষা পায়। এদিকে পিছনে ধাওয়া করে মোগলাবাজার থানাধীন এলাকা থেকে ঐ কনেস্টবলকে উদ্ধার করেন আইসি সানাউল ইসলাম সহ পুলিশের টিম। কিন্তু ওসি মনির চোরাকারবারিদের রক্ষার কবজ হওয়াতে আহত ওই কনস্টেবলকে বলেন, এসব বিষয় জানাজানি হলে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দিতে হবে।
ওসি মনির হোসেনের কথা অমান্য করে তার গাড়ি চালক শফিক মিয়ার সাথে কন্ট্রাকের মধ্যে কয়টি গাড়ি আইসি সানাউল ইসলামের আদেশক্রমে ধরে ফেলায় ওসি মনির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে কমিশনারকে ভূল তথ্য দিয়ে গত ২৩/১০/২০২৪ইং তারিখে কমিশনার আদেশ নং- ২৩৭৯ মূলে শাহপরান (রহ.) মাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই, এএসআই, এটিএসআই ও কনেস্টবল সহ একযোগে ১৯জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করিয়েছেন। যা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ওসি মনির হোসেনের কথার অবাধ্য হয়ে একাধিক চোরাই চিনির গাড়ি আটক করার কারণে ফাঁড়িতে আইসি হিসেবে খুব একটা বেশিদিন থাকতে পারেন নি এসআই আব্দুল আজিজ। এক পর্যায়ে এক কনেস্টবলকে দিয়ে কৌশলে কমিশনার বরাবরে আইসি আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করান ওসি নিজেই। পরে এসআই আব্দুল আজিজকে বদলি করা হয় অন্যত্র। এদিকে শাহপরান (রহ.) থানা এলাকার সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত এলাকা-জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের রয়েছে সহজ সড়ক যোগাযোগ। চোরাই চিনির গাড়ি সরাসরি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌঁছাতে এসএমপির দক্ষিণের এ থানা অতিক্রম করতে হয়। এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে নগরী পার করে দেওয়ার কাজটি ওসি মনির হোসেনের গাড়ির চালক শফিক করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১৩ পড়েছেন