Sharing is caring!
সিলেটের ভুমিখেকো এক মাফিয়ার নাম রতনমনি মোহন্ত। বাড়ি সিলেট নগরীর মেজরটিলা ইসলামপুর (দেবপুর-নাথপাড়া) এলাকায়। সে ঐ এলাকার তার বিরুদ্ধে ৮টি ও ৩৭টি দলিলের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রায় কোটি টাকার উর্ধ্বে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃত রসময় মোহন্তের ছেলে। রতন মোহন্ত সিলেটে ভুমি জালিয়াত চক্রের গডফাদার হিসাবে দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে দাপটের সাথে জাল জালিয়াতির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভুমি জালিয়াতি করে সে এখন কয়েক শত কোটি টাকার মালিক। রতম মনির আরেক সহযোগীর নাম জীবন মজুমদার। তার বাড়িও সিলেট সিটি করর্পোশেন এলাকার ৩২ নং ওয়ার্ডে আটালু আবাসিক এলাকায়। সে সিলেট বিভাগীয় স্যাটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার হিসাবে পরিচিত। এই দুই জালিয়াতের হাত থেকে রক্ষা পায়নি দেবোত্তর সম্পত্তিও। হামলা-মামলা ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে নগরীর বিভিন্ন নিরিহ মানুষের জমির জাল দলিল করে চড়া দামে বিক্রি করাই তাদের মূল পেশা।
কেউ তাদের জালিয়াতির প্রতিবাদ করলেই তার উপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন নিপিড়ন। বাদ যায়নি সংবাদকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলেই তারা বিভিন্ন রকম ব্যক্তি দিয়ে ঐ সংবাদ কর্মীকে নাজেহালসহ নির্যাতন করে থাকেন। স্থানীয় নাথপাড়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে নিশ্চিত করেছেন, এই রতন মনি মোহন্ত একাধিক পরিবারকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে দিয়েছে। রতন মনির রয়েছে নিজস্ব একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী। এদের ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে জিম্ম করে টিপসই নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন টেবিলে অভিযোগ দাঁড় করিয়ে রাখে। তার রোষানলে পড়ে সমাজচ্যুত এক ঘরে আছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। নাথপাড়া এলাকায় রতন মনি রোশানলে পড়ে দীর্ঘদিন থেকে একঘরে অবস্থায় বসবাস বিষু দেবনাথ, রনজিত দেবনাথ, ভুবেন্দ্র দেব নাথ, অশোক দেব নাথ এর তিন ভাই, বাবুল দেব নাথ ও অরুন নাথ এর পরিবার। বিগত ২০০৭ সাল থেকেই শুরু হয় তার এই অসামাজিক কুসংস্কার কৃর্তিকলাপ। প্রাণভয়ে এ সকল পরিবার মুখ খুলতে রাজি নয়। তার এই কর্মকান্ডে উৎসাহ জোগান একই এলাকার আরও দুই তিনজন ব্যক্তি, যারা রতম মনির জালিয়াতির সাথে আড়ালে থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকেন। রতন মনি মোহন্তের আকের নাটের গুরু সুনামগঞ্জ জেলার জনতা বাজার এলাকার দিরেন্দ্র দেব নাথ নয়ন। কৌশলে রতন মনি মোহন্ত অনেক সহায় সম্পত্তি নয়নের নামে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করিয়েছেন। পাহাড় (টিলা) রকম ভুমিও বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। রতন মনির নেতৃত্বে নির্বিচারে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনেক পাহাড় (টিলা) কেটে ধ্বংস করা হয়েছে।
জনশ্রুতি রয়েছে রতম মনির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে দুদক অর্ধশতাধিক দলিলের জমির শ্রেণী পরিবর্তনের তথ্য পায়। কিন্তু সে সময় টাকার বিনিময়ে রতন মনি মোহন্ত সব অপরাধ থেকে পার পেয়ে যায়। এদিকে বিগত ২২/০২/২০২২ইং- তারিখের একটি এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেট এর সহকারী পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন তদন্ত কার্যের প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করেন শ্রী রতন মনি মোহন্ত ৮টি দলিলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ৩১,৪৩,১০২/৪০ (একত্রিশ লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার একশতদুই টাকা চল্লিশ পয়সা) সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ধারা-৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৭১। অপর আরেকটি তদন্তে ৩/১০/২০২৩ ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক মোঃ আল-আমিন তিনি তার তদন্ত কার্যের প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করেছেন প্রতারণামূলক ভাবে শ্রী রতন মনি মোহন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৭টি দলিলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারের সর্বমোট ৮০,২৭,৩৬৩/- (আশি লক্ষ সাতাশ হাজার তিনশত তেষট্টি) টাকা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ দন্ডবিধি অপরাধে অভিযুক্ত। কিন্তু রহস্যজনক হলেও সত্য যে, রতন মনি মোহন্তের সর্বসাকুল্যে অল্পদিনে গড়ে তোলা পাহাড়সম অঢল ধন-সম্পদের হিসেব দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এড়িয়ে গেছে। অদৃশ্য কারনে বিলাসবহুল বাড়ী-গাড়ি, মার্কেটসহ কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স আজও ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। রতন মনি মোহন্তকে নিয়ে থাকছে আগামী সংখ্যায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
৪২ পড়েছেন