• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট নগরীতে প্রতিদিন বাড়ছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
সিলেট নগরীতে প্রতিদিন বাড়ছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা

Sharing is caring!

ডেস্ক রির্পোট:সিলেট নগরীতে প্রতিদিন বাড়ছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা । পুলিশের টহল জোরদার না থাকায় সিলেটে বেড়েছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা। দিনের বেলাতেও অস্ত্র ব্যবহার করে টাকা লুটের ঘটনা ঘটছে। বেড়েছে বাসাবাড়িতে চুরি। এতে জনমনে উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে।

তবে সিনিয়র আইনজীবীসহ সচেতনমহল বলছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তাদের মনোবল কিছুটা ভেঙে গেছে। তাদের টহলও আগের মতো জোরদার নয়। এই সুযোগে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। সেই সাথে থাকতে পারে সরকারবিরোধীদের মৌন মদদ।

অন্যদিকে, সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ(এসএমপি) কমিশনার বলছেন, পুলিশের টহল সতর্ক আছে, তারপরও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। ক্রমশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তার আশা।

নগরীতে দিন দুপুরে দুই সহোদরকে জিম্মি করে জমি কেনার ৪২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

গত সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ২টার দিকে শিবগঞ্জ ফরহাদ খাঁর পুল সংলগ্ন ইয়ামাহা মোটরসাইকেল শোরুমের সামনে ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক।

এর আগে , নগরীর শিবগঞ্জ ও সাদিপুরে মধ্য স্থান থেকে রসুন বুঝাই একটি ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে আটক করে । আটক এক যুবক বলেন, সন্ধ্যার সময় ১৭০ বস্তা চাইনিজ রসুন নিয়ে একটি ডিআই ট্রাক কালীঘাট থেকে জৈন্তা যাচ্ছিলো । শিবগঞ্জ আসার পর হাতিম আলী মাজার থেকে সাদিপুর এর মধ্যে আসতেই কিছু লোক মোটরসাইকেল দিয়ে আমাদের গাড়ির গতীরোধ করে । তারা বলে, আমাদের মোটরসাইকেলর পিছনে পিছনে আসার জন্য । সবুজবাগের হাওরের আসার পর তারা রসুন কিনে আনার কাগজ দেখাতে চাইলে,কাগজ দেখেও মাল লুট করতে শুরু করে দেয়। তারা গাড়িটি জমিনে নামিয়ে দেয় ।এর মধ্যে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানালে কিছু সময়ের মধ্যে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন ।কিন্তু এর মধ্যে লুটেরারা সিএনজি টমটম রিকসাযোগে গাড়ি থেকে প্রায় দেড়শ বস্তা রসুন সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় ।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় শাহ পরাণ ( র: ) থানায় মামলা কার হয়, মামলা নং ৫ ।

এ বিষয়ে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, ছিনতাই হওয়া রসুন এলাকার বিভিন্ন জাগা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে । বাকী যা আছে তাও তাড়াতড়ি উদ্ধার হবে ।তিনি আরও বলেন, এসব ছিনতাই কারীদের সামাজকি ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এসব ছিনতাই কারীদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযেগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি ।

সিলেট নগরীর টিলাগড় পিউরিয়া ফুড প্রোডাক্টস লি: এর সামন থেকে প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো গ – ১২-৫২১৪ নাম্বারের গাড়িটি ছিনতাই হয় ।

ছিনতাই পরপর্তীতে শাহ পরাণ (র:) থানায় অভিযোগ করেন গাড়ির মালিক । উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আবুল হোসেন চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হোন। তিনি বলেন, থানায় গাড়িটির অভিযেগি করার পর থেকে অনেক খোঁজ খবর নিয়ে মধ্যরাতে গাড়িটি সন্ধ্যান মিলে নগরীর উপশহর ই ব্লকের ১ নাম্বার রোডে’র গলীর ভিতরে।

গাড়ি উদ্ধারের সাথে সাথেই গাড়ির নিজ মালিকে বুঝিয়ে দেই । তনি আর বলেন, গাড়িটি ১ নাম্বার গলীর ভিতরে কে বা কারা নিয়ে এসেছে তা দিনের বেলা সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে ও আশেপাশের বাসার লোকজনকে জিজ্ঞেস করে পরবর্তী ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে। এখন প্রায় মধ্য রাত যার জন্য বাসার মানুষ জনকে জিজ্ঞেস করা যাচ্ছে না।

গত ২রা নভেম্বর বেলা বারোটার দিকে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় ছিনতাইকারীরা ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড এর নগদ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শাহপরান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড সিলেট বিভাগের ডিজিএম মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন। কিন্ত, অভিযোগের চব্বিশদিন পার হয়ে গেলেও এখনো ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেননি পুলিশ।

শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেনও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। সে সময় অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

গত ২৯ অক্টোবর সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকায় বাসার ভেতর থেকে একটি নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় কতোয়ালী থানায় ওই গাড়ির মালিক হোসেন আহমদ সিদ্দিকী দেরিতে হলেও ৯ নভেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। যার নম্বর ৭১৫। সেই মোটরসাইকেলটিও উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই।

একইভাবে গত ২রা অক্টোবর আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটার দিকে শাহজালাল উপশহরের ডি-ব্লকের ২৫ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসার বাসিন্দা সমবায় অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের বাসা থেকে একটি ‘আইফোন-১৩’ চুরি হয়। ভোরবেলা ঘুম থেকে মোবাইল না পেয়ে তিনি পরদিন ৩ অক্টোবর শাহপরান (রহ) থানায় সাধারণ ডায়েরী (নম্বর-১৯২) করেন। ভূক্তভোগীরা বলছেন, প্রায় সময় এ রকম ঘটনা ঘটছে। নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ সকল ঘটনায় ছিনতাইকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমন অপরাধ বাড়তেই থাকবে।

ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড সিলেট বিভাগের ডিজিএম মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন এর সাথে গতকাল শনিবার রাতে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা পাওয়ার চেয়েও জরুরী ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ সকল ঘটনার সাথে সিলেটের ভাবমূর্তির একটা সম্পর্ক রয়েছে।

সমবায় অফিসার মহবুবুর রহমান’র সাথে গতকাল শনিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জিডির পরে যোগাযোগ করেছি কয়েকবার, কোনো সুখবর পাইনি।’ সিলেট মহানগরীর করেরপাড়ায় দুর্গাপূজার সময় দুটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি করেরপাড়ায় পয়েন্টের বাসায়। পরিবারটি ঢাকায় থাকায় চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা পুরো ঘর তছনছ করে একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরিবারের কেউ পুলিশকে জানায় নি। তবে তাদের এক নিকট আত্মীয় বিষয়টি এই প্রতিবেদককে অবহিত করেন। ওই সময় আরেকটি চুরির ঘটনা ঘটে করেরপাড়ার সতীশ সরণি এলাকায়। পূজার সময় ওই বাসার ভিতর প্রবেশ করে স্বর্ণসহ অনেক টাকার মালামাল নিয়ে যায় চুরেরা।

সূত্র জানায়, সকালে দূরবর্তী এলাকা থেকে বাসযোগে আসা যাত্রী ও সকালে চাকরিজীবী ও হাঁটতে বের হওয়া মানুষ ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেট। তবে নতুন ব্রীজের নিচ থেকে বন্দরবাজার আসার সময় সিএনজি অটোরিকসার যাত্রীরা প্রায় প্রতিদিন মোবাইল, টাকা চুরির শিকার হচ্ছেন। একটি চক্র চারজন যাত্রী নিয়ে আগেই বসে থাকে। শুধু একজন যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকে। তারপর সময় বুঝে ওই একজন যাত্রীর কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে মাঝপথে গাড়ির সমস্যা দেখিয়ে নামিয়ে চম্পট দেয়। এ সকল ঘটনায় স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ আইন বিশেষজ্ঞরা।

সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনায় তাদের মনোবল কিছুটা ভেঙে গেছে। যে কারণে তারা মাঠে নেই। এজন্য চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। তবে পুলিশ সংগঠিত না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়ানো উচিত।

শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, টহলপুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আমরা খুবই আন্তরিক। তারপরও কিছু ঘটনার খবর আমরা পেয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুলকলি’র ছিনতাইয়ের পরে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এখনো। এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘টহল পুলিশ কাজ করছে নিয়মিত। আমি নিজে রাতে তদারকি করছি। তারপরও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, উঠতি বয়সী কিছু অপরাধী আছে, এদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।

২০ পড়েছেন