Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিবেদন: শীঘ্রই সচল হচ্ছে সিলেটের পাথর কোয়ারি। এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন সিলেটের কোয়ারি সংশ্লিষ্ট প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী মহলেও ফিরতে যাচ্ছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। এর আগে ৯ ও ১০ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেন। পাঁচটি কোয়ারির ভৌগোলিক জরিপ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জরিপের পর সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। এতে কমিটির সদস্যরা কোয়ারি চালুর বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনের পরই কোয়ারি চালুর কথা থাকলেও এরপর মিলেনি কোয়ারি খোলার অনুমতি। এ অবস্থায় সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর কোয়ারি খোলার অনুরোধ জানিয়ে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাবরে সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য, ও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আরও একটি চিঠি পাঠান। তিনি চিঠি পাঠানোর পর আশায় বুক বেঁধে আছেন সিলেটের কোয়ারি সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে চলতি বছরের ৩১মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ৪ মাস পর কোয়ারি খোলার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম ডিও লেটারও দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কোয়ারি খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের পর থেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের সাড়ে ৬ মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এখনো জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত কবে আসবে সেই প্রতীক্ষা যেন শেষ হচ্ছিল না। অন্যদিকে পাথর তোলার ভরা মৌসুমে কোয়ারি চালুর ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সবুজ সংকেত না মেলায় হতাশ পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না এলে ফের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে। জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। পরে অপরিকল্পিত ও যন্ত্রের সাহায্যে পাথর তোলা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ কোয়ারির মধ্যে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দিতে পাথর তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।
এদিকে, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ৭টি কোয়ারির প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন কোয়ারির সঙ্গে জড়িত পাথর ও পরিবহন ব্যবসায়ী, বেলচা, বারকি, পরিবহন ও লোড-আনলোড শ্রমিকরা। যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলী সাংবাদিকদের জানান, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। প্রতিবেদনে কোয়ারি চালুর পক্ষে বা বিপক্ষে কী মতামত দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি। অপরদিকে, কোয়ারি খোলা না হলে ফের পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির আহ্বায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং, লোভাছড়াসহ সব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সিলেটের অর্থনীতি জড়িত। কোয়ারি বন্ধ থাকায় লাখ লাখ পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিক এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক পথে বসেছেন। পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে ৬ বছর ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। মন্ত্রণালয় দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে এ মাসের শেষের দিকে ফের ধর্মঘট ডাকা হবে। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরও আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে পাথর ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশার মালিক-শ্রমিকসহ পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। এব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবরে দ্বিতীয়বারের মতো পাঠানো ডিও লেটারে সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, কোয়ারিসমূহ ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় প্রত্যেক বছর পাহাড়ি ঢলের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানির সাথে প্রচুর পরিমাণে পাথর আসে। কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ এবং পাথর উত্তোলন না করায় বর্তমানে অনেক পাথর নদীর প্রবেশ মুখে স্তুপাকার হয়ে আটকে আছে। এর কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে জাফলং কোয়ারির পার্শ্ববর্তী খাসিয়াপুঞ্জি, বিছনাকান্দি কোয়ারির পার্শ্ববর্তী বা বিছনাকান্দি মৌজার এবং ভোলাগঞ্জ কোয়ারির কালাইরাগ ও কালাসাদক মাহীর্তীর আশপাশের গ্রামসমূহে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ও এলাকাসমূহ বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পাথর কোয়ারির প্রবেশ মুখসমূহ উন্মুক্ত করার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিসহ নদীর পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে এবং আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রæত নিষ্কাশন হবে। ফলে হাজার হাজার একর জমির ফসল বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। কোয়ারি সমূহ খোলার দাবিতে শ্রমিক সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, বছরব্যাপী সভা-সমাবেশ, অবরোধ, মানববন্দন করে বিভিন্ন পর্যায়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসছে কোয়ারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন। সর্বশেষ চলতি মাসের গত ১৭ ডিসেম্বর সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনসহ অবস্থান ধর্মঘট হয়েছে। পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে উল্লেখ করে ডিও’তে বলা হয়, এর ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ডিও লেটারে কোয়ারিসমূহ থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না দিলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী এমরান আহমদ। এমতাবস্থায় তিনি বর্ণিত বিষয়গুলি বিবেচনা করে অসহায়, দরিদ্র শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ জীবন-জীবিকার স্বার্থে সনাতন পদ্ধতিতে স্থানীয় শ্রমিক দ্বারা কোয়ারি সমূহ থেকে পাথর উত্তোলনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের অনুরোধ জানান। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.মজিবর রহমান জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোয়ারি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের মতামত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কাজ করবে।
৬৫৩ পড়েছেন